৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
স্টাফ রিপোর্টার : হাইকোর্টের রিট বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ময়মনসিংহ পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কলেজ গেইটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় অবরোধ করে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। হাইকোর্টের রিট বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে বক্তব্য দেন। তাদের সরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সচল করার চেষ্টা করছি।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বলেন, কারিগরি শিক্ষা সেক্টর সংস্কারের উদ্দেশ্যেই আন্দোলন করা। বাহ্যিক কোনো উদ্দেশ্যে এই আন্দোলনে নেই। সারা বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কারিগরি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। লাখো শিক্ষার্থীর আশা, ভরসা ও স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উত্থাপিত হয় ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো-
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাকিব জিলানী রামিম, এনায়েত আহমেদ রবিন, সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রেদওয়ানুজ্জামান রাতুল, ইমরান শেখসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।