বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫

স্টেশন-টার্মিনালে বাড়ছে চাপ, ছুটি শেষে চেনা রূপে ফিরছে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল আজহা উপলক্ষে দীর্ঘ দশ দিনের ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকা আবারও তার চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে। আগামীকাল রোববার (১৫ জুন) থেকে সরকারি-বেসরকারি, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণোদ্যমে খুলছে।

ফলে ছুটির আমেজ কাটিয়ে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে।
শনিবার (১৪ জুন) সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে ব্যাগপত্র আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল।

ঈদ আনন্দ পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে যারা গ্রামের বাড়ি কিংবা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন, তারা এখন দলে দলে ফিরছেন রাজধানীতে। গতকাল শুক্রবার থেকেই এই ফিরতি যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে এবং আজ শনিবার তা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে গণপরিবহনে গত কয়েকদিনের তুলনায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

ময়মনসিংহ থেকে ফিরে মহাখালীতে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল হাসান জানান, ‘ঈদের ছুটিটা খুব ভালো কাটল। গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে অনেকদিন পর সময় কাটাতে পারলাম। এখন আবার কর্মস্থলে ফেরার পালা। একটু খারাপ লাগছে, তবে জীবিকার প্রয়োজনে ফিরতেই হবে। ’

কুমিল্লা থেকে আসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর সিভিল ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাশফিক ছিদ্দিকীর সঙ্গে শাহবাগে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস এখনও পুরোপুরি খোলেনি, তবে সামনে পরীক্ষা, তাই প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় ফিরে এসেছি। বন্ধুদের অনেকে এখনও আসেনি। ঢাকা এখন অনেকটাই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। বন্ধুদের আসার অপেক্ষায় আছি। ’

নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মাহিম বলেন, ‘বাড়ি থেকে আসার সময় রাস্তায় ঢাকামুখী গাড়ির চাপ ছিল অনেক। আমি গতকাল ঢাকায় এসেছি। আজ একটি কাজে ধানমন্ডি থেকে আগারগাঁও যেতে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে। এর মধ্যে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করেছি ১৫ মিনিট। আর বাকি ২৫ মিনিট সময় লেগেছে বাসে। ঢাকার ভেতরের রাস্তা এখনো অনেকটা ফাঁকা। স্বাভাবিক সময়ে এইটুকু পথ যেতে ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেত। তবে সড়কে গণপরিবহনের ঘাটতি ছিল। ’

রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে দুপুরের পর থেকে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় শহরের ভেতরেও ধীরে ধীরে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে এবং দোকানপাটগুলোও খুলতে শুরু করেছে। ছুটি শেষে ঢাকা সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির চাকাও আবার গতি ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঈদের ছুটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা স্থবির থাকলেও আগামীকাল থেকে ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে চালু হলে লেনদেন বাড়বে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও নতুন করে তাদের ব্যবসা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পল্টন মোড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোলাইমান হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে বেচাকেনা তেমন ছিল না, সবাই গ্রামে চলে গিয়েছিল। এখন আবার মানুষ ফিরতে শুরু করেছে, দোকানেও ভিড় বাড়ছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা ভালো হবে। দোকান খুলেছি আজ সকালে, সকাল থেকেই টুকটাক বিক্রি শুরু হয়েছে। ’

বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহন করা পিকআপভ্যানচালক আব্দুল খালেক বলেন, ‘ঈদের আগে বাড়তি আয়ের জন্য যাত্রী নিয়ে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম, ফিরতি পথে ফাঁকা এসেছিলাম। এখন আবার মালামাল পরিবহনের ট্রিপও বাড়ছে। রাস্তাঘাটে মানুষ আর গাড়ির চাপ অনেক বেড়েছে। ’

ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের মধ্যে যেমন কর্মে ফেরার উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে, তেমনি অনেকে আবার কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে ঢাকার যানজট ও কোলাহলময় পরিবেশের কথা চিন্তা করে কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করছেন। তবে সব মিলিয়ে দীর্ঘ দশ দিনের ছুটির আমেজ কাটিয়ে ঢাকা আবারও তার চিরচেনা কর্মব্যস্ত রূপে ফিরছে। আগামীকাল থেকে রাজধানী ফিরে পাবে তার পূর্ণ প্রাণচাঞ্চল্য, যা ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *