শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

নেত্রকোনায় ১২৫ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার অন্তত ৩৫ ইউনিয়নের ১২৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৩৯ পরিবার। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দুই শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান।

সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে কলমাকান্দা উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অবশ্য জেলার বড় নদী সোমেশ্বরী ও কংস নদের পানি কিছুটা কম ছিল। তবে ধনু, নেতাই, মহাদেব, মঙ্গলেশ্বরী, মগড়াসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বুধ থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। শেরপুরের ভোগাই ও কংস নদের পানি জারিয়া এলাকা হয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে পাঁচ উপজেলায় ১২৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া, কাকৈইগড়া ও গাঁওকান্দিয়া; কলমাকান্দার লেঙ্গুরা, খারনৈ, কৈলাটি, পোগলা ও বড়খাপন; পূর্বধলার জারিয়া ধলামূলগাঁও; নেত্রকোনা সদরের কালিয়ারাগাবরাগাতি, মৌগাতি, মেদনি; বারহাট্টার বাউসী ও রায়পুর ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুকুরসহ আমন ফসল ডুবে গেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জারিয়া ইউনিয়নের জামিয়া নাটেরকোনা মাদরাসা ও নাটেরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯ এবং কুল্লাগড়ার পশ্চিম কাকড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ২০টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির আমন ধান।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বন্যার পানির কারণে ১৮৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, জেলার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। আকস্মিক বন্যায় পাঁচ উপজেলায় ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

এদিকে স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে দুই শতাধিক পুকুরের মাছ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর বলেন, পাঁচ উপজেলায় ২০৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার তথ্য পেয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাওয়ার জাহান বলেন, উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। কংস নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সকাল ৭টা থেকে কমতে থাকে। এখন এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নদ-নদীর পানি এখন দ্রুত কমে যাবে। এসব পানি খালিয়াজুরির ধনু নদ হয়ে মেঘনায় চলে যাবে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি রয়েছে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার জন্য বরাদ্দ করা নগদ তিন লাখ টাকা, দুই হাজার ৫০০ প্যাকেটে শুকনো খাবার ও ৬০ টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *