বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫
বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫

নেত্রকোনায় হাওরের ৮৭ ভাগ বোরোধান কাটা শেষ, স্বস্তিতে কৃষক

নেত্রকোনা সংবাদদাতা : নেত্রকোনা জেলার হাওরের ৮৭ ভাগ জমির বোরোধান কেটে ঘরে তুলেছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না থাকায় সঠিক সময়ে ধান কেটে তা সংরক্ষণ করে স্বস্তিতে রয়েছেন হাওরের কৃষকরা।

গত বেশ কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সঠিক সময়ে বীজ, বিদ্যুৎ, সেচ, সারসহ কৃষি সংক্রান্ত সকল সহযোগিতা পর্যাপ্ত থাকায় এ বছর ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।

হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জের মাঘানের গৌড়াকান্দা গ্রামের কৃষক মুখলেছুর রহমান জানান, “গত ১০ -১৫ বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে, এমন কোন জমি নাই যেখানে কাঠাপ্রতি ৫ মণের কম ধান হয়েছে”

কম সময়ে হাওরের বোরোধান কর্তনে হার্ভেস্টার মেশিন বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে এবং স্বস্তি দিয়েছে হাওরের কৃষকদের।

খালিয়াজুড়ী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা জানান, “খালিয়াজুড়ীতে হাওরের প্রায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে, অন্যান্য উপজেলার হাওরের বোরোধান কাটা প্রায় শেষের দিকে।আর এক সপ্তাহের হাওরের বেশিরভাগ জমির ধান কাটা হয়ে যাবে। এ বছর ধানের দামও বেশ ভালো,ধানের মান অনুযায়ী ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত এখন নাগাদ দাম পাওয়া যাচ্ছে, আশা করা যায় ধানের দাম আরো বাড়বে ”

শুধু ধান কর্তনেই শেষ নয় বরং কাজ শুরু হয় কৃষাণ কৃষাণীদের। ধান সিদ্ধ, শুকানো এবং তা সংরক্ষণ করার মাঝে রয়েছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ যা নেত্রকোনায় ‘দাওয়ামারী’ নামে পরিচিত। এবছর প্রকৃতি কৃষকদের অনুকূলে থাকায় দাওয়ামারী কাজে কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটেনি এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পেরেছেন।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বাসসকে জানান, “আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা নেই, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি,এ বছর জেলার কৃষকরা স্বস্তিতে হাওরের ধান কেটে তা সংরক্ষণ করছেন,আশা করা যায় আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে হাওরের বোরোধান কাটা শেষ পর্যায়ে চলে আসবে ”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাসসকে জানান, “এ বছর নেত্রকোনা জেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর বোরোধানের আবাদ হয়েছে তার মধ্যে হাওরের অধীনে জমির পরিমান ৪১ হাজার ৭৫ হেক্টর। আজকে পর্যন্ত হাওরে শতকরা ৮৭ ভাগ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে, যেখানে জমির পরিমাণ ৩৫ হাজার ৭৩০ হেক্টর অপরদিকে জেলার মোট আবাদকৃত জমির মধ্যে ৩৮ ভাগ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে ”

এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হেক্টর বেশি জমিতে বোরোধানের আবাদ করা হয়েছে। বোরো ধান আবাদের এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪ শত ৪৮ হেক্টর , আমাদের অর্জন হয়েছে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪ শত ৬০ হেক্টর।

তারমধ্যে শুধুমাত্র হাওরেই আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৭৫ হেক্টর। বোরো মৌসুমে ৪ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ২৭শ কোটি টাকা। শুধু হাওরেই প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকার চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *