শনিবার, এপ্রিল ৫, ২০২৫
শনিবার, এপ্রিল ৫, ২০২৫

টমেটোর নতুন জাত উদ্ভাবন বাকৃবির

বাকৃবি সংবাদদাতা : টমেটো বাংলাদেশের মানুষের জন্য জনপ্রিয় একটি খাবার, যা সালাদ ও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। প্রতি বছর শীতকালে দেশে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হলেও সবগুলো জাত সমান মানসম্পন্ন নয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা ‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১’ নামে নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ টমেটো শুধু আকৃতিতে বড় নয়, মিষ্টি স্বাদযুক্ত ও পুষ্টিগুণে অনন্য।

নতুন উদ্ভাবিত উন্নত জাতের ‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১’ এর মাংসল গঠন, বেশ কয়েকটি আলাদা কোষ এবং বড় আকৃতি- অন্যান্য সাধারণ টমেটোর চেয়ে আলাদা করেছে। প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ৩০০-৬০০ গ্রাম হয়। যা সাধারণ টমেটোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সাধারণত টমেটোর যেখানে দুটি কোষ থাকে সেখানে এই জাতের টমেটোতে অনেকগুলো কোষ রয়েছে, যা একে অনন্য করে তুলেছে। কোষবিন্যাস দেখতে অনেকটা গরুর মাংসের মতো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বাউ বিফস্টেক’।

এ টমেটোতে উচ্চ পরিমাণে গ্লুকোজ (১.২%), ফ্রুকটোজ (৩.৭%) ও সুক্রোজ (৩.৬%) থাকায় এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং স্বাদেও মিষ্টতা রয়েছে।

গবেষণা কাজটি ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় এবং সংকরায়ন ও বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। চার বছর জাতটি নিয়ে কাজ করার পর ২০২২ সালে অধিকতর কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আরিফ হাসান খান রবিন ও অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান গবেষণার তত্ত্বাবধান করেন। এছাড়া কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেশকুল জান্নাত তাজ তার স্নাতকোত্তর গবেষণার অংশ হিসেবে এ জাতটি নিয়ে দীর্ঘ ৩ বছর কাজ করেন।

অধ্যাপক আরিফ হাসান খান রবিন বলেন, “বাউ বিফস্টেক টমেটো খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মিষ্টতা যুক্ত। সাধারণ টমেটোর তুলনায় এর আকৃতি অনেক বড় এবং গঠনেও পার্থক্য রয়েছে। আকারে এটি অন্যান্য টমেটোর প্রায় দ্বিগুণ। বার্গার তৈরিতে এটি অত্যন্ত উপযোগী। কারণ এক টমেটোর মাত্র একটি স্লাইসই পুরো বার্গারের জন্য যথেষ্ট। জাতটি হেক্টরপ্রতি ৪০-৫০ টন ফলন দিতে সক্ষম এবং ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়।”
ফলন সম্পর্কে কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, “বাউ বিফস্টেক টমেটো-১ গাছের উচ্চতা ৯০ থেকে ১২০ সেমি এবং এটি তুলনামূলকভাবে কম থোকা ধরে। তবে প্রতিটি ফল আকারে বড় হওয়ায় গড়ে ৩-৪টি টমেটোতেই ১ কেজি ওজন হয়ে যায়। একটি গাছে সাধারণত ১৫ থেকে ২০টি টমেটো ধরে। ফলে প্রতি গাছ থেকে গড়ে ৫-৬ কেজি টমেটো উৎপাদিত হয়, যা সাধারণ টমেটো গাছের তুলনায় বেশি।”

জাতটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাউ বিফস্টেক টমেটো-১ কম বীজযুক্ত, মাংসল ও উজ্জ্বল লাল রংয়ের হয়ে থাকে। এটি কোনো ধরনের সংরক্ষণ উপায় ছাড়াই সাধারণ তাপমাত্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন সংরক্ষণ করা যায়। পোকামাকড় ও রোগ বালাই হয় না বলেলেই চলে। ফলে ক্ষতিকর কীটনাশকের তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়।”
তিনি আরো বলেন, “উৎপাদন কৌশল অন্যান্য জাতের তুলনায় অধিকতর পরিবেশবান্ধব। এছাড়া এর পুষ্টি উপাদানের কার্যকর ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। এ জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির জন্য বেশ উপযোগী এবং এটি স্থানীয় কৃষি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *