উন্নয়নের পরবর্তী ধাপের জন্য অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর অত্যাবশ্যক : অর্থ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক : এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সংক্রান্ত একটি জাতীয় কৌশলপত্রে বলা হয়েছে যে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর অত্যাবশ্যক।
স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি বা এসটিএস শীর্ষক উক্ত কৌশলপত্রে আরও বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে।
রবিবার রাজধানীতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগের (ইউ এন ডেসা) যৌথউদ্যোগে আয়োজিত ‘ভ্যালিডেশন ওয়ার্কশপ অন বাংলাদেশ ন্যাশনাল স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি’ শীর্ষক কর্মশালায় উক্ত কৌশলপত্রের বিভিন্ন দিকসমূহ তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস।
এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপি’র সদস্য তেফারে তেসফাচিউ। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অর্থ উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষম আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী তার বক্তৃতায় বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াসমূহ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসইকরণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন, শুল্ক সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সহজীকরণ, প্রযুক্তিগত ও দক্ষতাগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের মান ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) লামিয়া মোরশেদ তার বক্তৃতায় বলেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব।
ইআরডি সচিব জনাব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী সভাপতির বক্তৃতায় স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারের যৌথ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস বলেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নতকরণ, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানব সম্পদে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ উত্তরণের ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি’র সদস্য তেফারে তেসফাচিউ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল হতে পারে।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর।
উল্লেখ্য, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন সময় শেষে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। জাতিসংঘের নিয়মানুসারে উত্তরণের প্রস্তুতকালীন বাংলাদেশকে একটি স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি বা এসটিএস প্রণয়ন করতে হবে।
সম্প্রতি ইউ এন ডেসার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার উক্ত স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির খসড়া প্রস্তুতকরণের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে কয়েকদফা আনুষ্ঠানিক মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে উক্ত স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত খসড়াটি সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট উপস্থাপনের মাধ্যমে তা চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে এই কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বেসরকারি খাত, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।