রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় খুন, অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সেই তরুণী

শাহিদা ইসলাম রাফা ও তৌহিদ শেখ তন্ময়
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ার দিলে প্রেমিকা শাহিদা ইসলাম রাফাকে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে এনে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেন প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময় (২৩)। এ সময় আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন নিহত শাহিদা। সম্প্রতি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানান প্রেমিক তৌহিদ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইয়াসিন।

তিনি জানান, হত্যার কাজে ব্যবহৃত পিস্তলটি গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর ওয়ারী থানা থেকে লুট করেন তৌহিদ। পরে ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি পিস্তল চালানো শেখেন। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জ আদালতে হাজির করলেন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হোসাইন রনির কাছে আসামি তৌহিদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

ডিবির তদন্তকারী কর্মকতা ইয়াসিন বলেন, ‘তৌহিদের বিরুদ্ধে মোট ৩টি মামলা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি কেরানীগঞ্জ ডোবা থেকে উদ্ধারের ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়ারী থানা থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনায় ওই থানায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তা ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গুলি করে শাহিদাকে হত্যা করার ঘটনায় অপর একটি মামলাসহ সবমিলিয়ে ৩টি মামলার আসামি তিনি। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি তৌহিদ গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর ওয়ারী থানা থেকে লুট করেন। অস্ত্র চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে পিস্তল চালানো শেখেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘টিকটকে শাহিদার সঙ্গে তৌহিদের পরিচয়। ৪ বছর চুটিয়ে প্রেম করলেও প্রেমিক তৌহিদ শাহিদাকে বিয়ে করতে চাননি। তিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন পরিবারের ইচ্ছায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। একটি-দুটি নয়, প্রকাশ্যে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ওপর ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে হত্যার পর ভোলার মনপুরা দ্বীপে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন আলোচিত শাহিদা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি তৌহিদ।’

পুলিশ জানায়, নিহত শাহিদার একাধিক সম্পর্ক নিয়ে তৌহিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। ঘটনার আগের দিন ২৯ নভেম্বর শাহিদাকে ফোন করে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের করে তৌহিদ। পরে লোকাল বাসে করে দুজনেই চলে আসেন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে। রাতভর সেখানে ঘোরাঘুরির পর শনিবার (৩০ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে খানবাড়ী সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় আসেন তারা। সেখানে প্রেমিকা শাহিদা নিজেকে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা দাবি করে প্রেমিক তৌহিদকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আশপাশের লোকজন তাদের মধ্যে চিল্লাচিল্লি শুনে এগিয়ে আসতে থাকলে তৌহিদ শাহিদাকে নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সার্ভিস লেন ধরে পদ্মা সেতু উত্তর টোল প্লাজা থেকে ২০০ মিটার অদূরে দোগাছি ফুটওভার ব্রিজ পার হন। পথে কয়েক দফায় শাহিদাকে চড়-থাপ্পড় মারেন তৌহিদ।

একপর্যায়ে আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সঙ্গে থাকা থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে প্রথমে গুলি ছুড়লে সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরপরই আরও ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়লে সেগুলো শাহিদার শরীরের বিভিন্ন অংশে বিদ্ধ হয়। মুহূর্তেই সড়কে পড়ে শাহিদার মৃত্যু হয়।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্টপুলিশের পরিদর্শক রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, ‘আসামিকে এদিন দুপুর ২টার দিকে আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হোসাইন রনি আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন।’

প্রসঙ্গত, নিহত শাহিদা রাজধানী ঢাকার ওয়ারীতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ও নারিন্দা এলাকার বলধা গার্ডেন-সংলগ্ন জনৈক কামাল মিয়ার বাড়িতে দেখাশোনার (ডে-কেয়ার) কাজ করতেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের মৃত মো. মোতালেবের মেয়ে তিনি। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। তা ছাড়া ৭-৮ বছর আগে শাহিদার একটি বিয়েও হয়েছিল। পরে সেই সম্পর্ক টেকেনি। গ্রেফতার তৌহিদ শেখ তন্ময় রাজধানী ঢাকার ওয়ারী থানার বর্ণগ্রাম এলাকার মৃত শফিক শাহের ছেলে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *