মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে শহিদ মিনারে চব্বিশের বিপ্লবীদের মিলনমেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার ঢল দেখা গেছে। এদিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার যেন চব্বিশের বিপ্লবীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। কর্মসূচি থেকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্র-জনতা। পাশাপাশি ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, দেশর বিভিন্ন জেলার ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য এবং উপজেলার ব্যানারে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা সকাল থেকেই শহিদ মিনারে উপস্থিত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে শহিদ মিনার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শহিদ মিনারের স্থান পেরিয়ে দুপাশের পথে এবং আশপাশে অনেকে স্থান ছাত্র-জনতায় পূর্ণ হয়ে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে যেমন ছাত্র-জনতা এসেছেন, তেমনি এসেছেন দ্বীপজেলা ভোলা থেকেও। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর থেকেও মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেছেন। তরুণরা ছাড়াও আন্দোলনে আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা এসে যোগ দেন। ফলে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার ঢল নামে শহিদ মিনার এলাকায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় স্থানটি। এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আজাদি না গোলামি, আজাদি আজাদি’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
মিরপুর থেকে আসা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন বলেন, জুলাইয়ে আমরা যে শহিদ ভাইদের হারিয়েছি, তাদের আমরা স্মরণ করব। নতুন যে বাংলাদেশ আমরা চাই, সে বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যেই আজ এখানে আসা।
শহিদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘আমার ছেলে শাহরিয়ার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় মিরপুর ১০-এ শহিদ হয়েছে। আমাদের কান্না কখনো থামবে না, এ বেদনা শেষ হওয়ার নয়। খুনি হাসিনা ও তার হেলমেট বাহিনী আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা লুৎফর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার হাত ধরে ২৪ সালে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। আজ বিপ্লবীদের মিলনমেলা। আমরা একতাবদ্ধ এটা প্রমাণ করতেই শহিদ মিনারে হাজির হয়েছি। ছাত্র-জনতার হাত ধরে আসা এই স্বাধীনতার মাধ্যমে দেশটাকে নতুন করে গড়তে চাই।
মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে এসেছেন ইমরান হোসেন। তিনি জানান, ১৯ জুলাই মিরপুরে আন্দোলনে অংশ নিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা তার একটি পা কেটে কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সহযোদ্ধারা একসঙ্গে মিলিত হব এজন্যই এখানে এসেছি। আমি পা হারিয়েছি দুঃখ নেই। তবে যারা আমার ভাইদের শহিদ করেছে তাদের বিচার চাই।’
এর আগে, সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত জনআকাক্সক্ষা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের প্রতিশ্র“তির ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আবির্ভূত হয়েছে। হাজারও শহিদ ও আহত যোদ্ধাদের আÍত্যাগের স্বীকৃতি ও জনআকাক্সক্ষার দলিলস্বরূপ ‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ অত্যাবশ্যক ছিল। এ ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এ ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব নিয়েছিল।
আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এ অবস্থায় ছাত্র-জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়োপযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।