বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিলীড নিউজ

ফ্যাক্ট চেকিং বিস্তৃত করতে সরকার সমন্বিত উদ্যোগ নেবে : তথ্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে সরকার ফ্যাক্ট চেকিং কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও কার্যকর করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

সংগঠনের সভাপতি হাসান শরীফের নেতৃত্বে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা এতে অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সময়ে মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্য ও সঠিক তথ্য প্রচারের জন্য মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাক্ট চেকিং প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকর হলেও সেটি অনেক সময় মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছায় না। এজন্য আমাদের মিডিয়াকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ভুল তথ্য এড়ানোর জন্য তথ্য যাচাই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মিডিয়া যেন বিভ্রান্তিকর তথ্যের শিকার না হয়, সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সরকারের প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রোপাগান্ডা সেল থাকে। কিন্তু আমাদের সেগুলোর দরকার নেই। এই সরকারের তথ্য প্রচারের জন্য গণমাধ্যম সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর প্ল্যাটফর্ম।

মতবিনিময় সভায় অনলাইন সম্পাদকরা ফ্যাক্ট চেকিংয়ের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাক্ট চেকিং কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও কার্যকর করতে সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা দিলে তা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভায় অ্যালায়েন্সের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার অনলাইন এডিটর পলাশ মাহমুদ বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলে সেটার সংবাদ সবার আগে অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এর পরবর্তী সময়ে, অনলাইন থেকে সংবাদটি প্রিন্ট এবং টেলিভিশনে স্থান পায়। সেক্ষেত্রে অনলাইনগুলো সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের আগেই ফ্যাক্ট চেক করতে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স কাজ করবে।

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আরটিভির ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান এম এ এইচ এম কবির আহম্মেদ বলেন, ফ্যাক্ট চেকিং প্রসেসটা সাহায্য করতে মিডিয়ার জন্য একটা এআই দিয়ে তৈরি ইমেজ ও কনটেন্ট ব্যবহার নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে, যেটা মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন কন্ট্রোল করতে সাহায্য করবে।

সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেল বলেন, বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন, নীতিমালা প্রণয়ন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে মুক্ত ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রচার নিশ্চিত করতে কাজ করবে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স। গণমাধ্যম সংস্কার, তথ্য কমিশন, অনলাইন বা ডিজিটাল সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন বা সংশোধনসহ এ সংশ্লিষ্ট যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের মতামত নিতে হবে।

অনলাইন গণমাধ্যমকেও ওয়েজবোর্ড ভুক্ত করা এবং অনলাইন ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অ্যালায়েন্সের সহ-সভাপতি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল বলেন, চিকিৎসকরা যেমন স্বাস্থ্যসেবা দেন, তেমনি সাংবাদিকরা দেন তথ্যসেবা। এখন এই সেবাদানে মিডিয়াগুলোর মধ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই শীর্ষে। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্র করে নানা ফেইক নিউজের ছড়াছড়ি হচ্ছে। এটার বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে এই সরকার। সংস্কারের ব্রত নিয়ে দায়িত্ব নেওয়া এই সরকারকে সর্বতোভাবে তাই সহযোগিতা দিতে চায় অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।

লুৎফর রহমান হিমেল আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে শুধু অনলাইন মিডিয়ার কর্মীদেরই নয়, এর পাঠকদেরও পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। পাঠকরা যদি যথেষ্ট সচেতন না হন, তাহলে চোখের পলকেই তিনি ভুল একটি সংবাদে নিজেকে যুক্ত করে ফেলবেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা শেয়ার করে ফেলতে পারেন। এটি সত্যি যে, অনেকে ইন্টারনেটের এই প্ল্যাটফর্মকে হৈ-হাঙ্গামার বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্যই এসেছে। ব্লেইম গেমের বড় একটি ক্ষেত্র এখন এই ইন্টারনেট-আশ্রিত মিডিয়া। এ লক্ষ্যে প্রচুর মানহীন নিউজ পোর্টাল খোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। পাঠকদেরও থাকতে হবে সচেতন। যত সচেতন-সুশিক্ষিত পাঠক হবে, তত অনলাইন মিডিয়া তাদের ভূমিকা সুচারুভাবে পালন করে যেতে পারবে। ফেক নিউজের কারবারিরা কোণঠাসা হয়ে যাবে। ফলে তথ্যপ্রবাহের এই যুগলবন্দী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেও একটি ভালো ফল এনে দেবে। মনে রাখতে হবে, ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার, বাট ফেক ইনফরমেশন ইজ ডেঞ্জারাস পয়জন!

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ বলেন, অনলাইন মিডিয়া বর্তমানে মানুষের কাছে দ্রুত তথ্য পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তবে তথ্য যাচাই ছাড়া কোনো কিছু প্রকাশ করলে সেটি ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে। এ বিষয়গুলোতে আমরা আরও সতর্ক থাকব।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যালায়েন্সের সহ-সভাপতি জাগোনিউজ২৪.কমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কেএম জিয়াউল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডিবিসি টেলিভিশনের ডিজিটাল প্রধান কামরুল ইসলাম রুবেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন প্রধান শরাফত হোসেন, অর্থ সম্পাদক দৈনিক আমাদের সময়ের অনলাইন প্রধান মঈন বকুল, অফিস সম্পাদক দীপ্ত টিভির অনলাইন প্রধান মাসউদ বিন আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *