সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রস্তুতকৃত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের (কেবিনেট) বৈঠকে অধ্যাদেশটি পাশ হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্তিশালী করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়ানো এবং নাগরিকদের অনলাইন হুমকি থেকে রক্ষা করতেই এই অধ্যাদেশ পাশ করা হলো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক উপস্থাপিত ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছিলো অন্তর্র্বতী সরকার।
ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং কথায় কথায় গ্রেফতারের অপসংস্কৃতির পর প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে পরবর্তী সময়ে প্রণয়ন করা হয় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’। ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কিত নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন করে গত মাসে।
এই অধ্যাদেশে ‘সাইবার সুরক্ষা’ বলতে ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার ডেটা, ট্রাফিক ডেটা ও সাইবার স্পেসে ভৌত অবকাঠামোর সুরক্ষার পাশাপাশি ব্যক্তিগত, ব্যাংকিং বা ব্যবসায়িক তথ্যের সুরক্ষাকে উল্লেখ করা হয়েছে। সঙ্গে পোর্টাল বা নেটওয়ার্কে অনুমোদিত ব্যক্তিদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাও বোঝানো হয়েছে।
খসড়ার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ রহিতক্রমে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন ও উক্ত অপরাধের বিচার এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন।’ সাইবার স্পেসকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে আন্তসংযোগকৃত সব ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলোর ভার্চ্যুয়াল জগৎ হিসেবে, যার মধ্যে ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগব্যবস্থা, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যোগাযোগব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত, যেখানে সংঘটিত হয় ডেটা তৈরি, অ্যাকসেস, প্রেরণ, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের অনলাইন কর্মকাণ্ড। ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার ডেটা, ট্রাফিক ডেটাও এটির অন্তর্ভুক্ত।
খসড়ায় রয়েছে ৯টি অধ্যায় ও ৫২টি ধারা। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি, জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, অপরাধ ও দণ্ড, অপরাধের তদন্ত ও বিচার ইত্যাদি নিয়ে রয়েছে আলাদা অধ্যায়। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত রাখার ব্যাপারে অবলম্বন করা হয়েছে সতর্কতা। বিশেষ করে জামিন–অযোগ্য অপরাধগুলো যৌক্তিক রাখার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়।