ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ দালাল আটক
স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগিদের হয়রানি ও জিম্মি করে প্রতারণার অভিযোগে র্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে ১৪জন দালালকে আটক করেছে। মঙ্গলবার সকালে অভিযান চালিয়ে আটক ১৪জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম।
আটককৃতরা হলেন-মন্টু মিয়া (২৫), মো.মাসুদ (৪৫), আলাল উদ্দিন (৬০), মো.আশরাফুল (২৭), মো.বিজয় (৫০), মো.আকাশ (২৪), ছোবহান মিয়া (৬৫), সুমন মিয়া (৩০), শাহদাৎ হোসেন বাবু (৩০), মো.শাকিব (২৪), আনিছ হোসেন রকি (৩৫), সাদ্দাম হোসেন (২৯), মমিনুল ইসলাম রবিন (৩০) এবং রোকসানা আক্তার (৩৫)।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৪’র একটি দল। অভিযানে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, মহিলা ওয়ার্ড, পরিক্ষাগার, আউটডোরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৪ দালালকে হাতেনাতে আটক করে। পরে তাদের সঙ্গে থাকা ১৪টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
এরপর বিধি অনুযায়ী আটককৃত দালালদের সর্বনিম্ন ১৫দিন এবং সর্বোচ্চ ২ মাস মেয়াদে সাজা দেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম।
হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখে উপায় নেই তারা দালাল। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগী ও তাদের স্বজনদের কৌশলে বুঝিয়ে নেয়া হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে করে মেডিকেল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ও আশপাশে গড়ে উঠেছে অগণিত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে অনেকটিরই নেই লাইসেন্স। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নানা বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের। যাদের কাজই হলো সরকারি হাসপাতাল ঘুরে নানা প্রলোভনে রোগীকে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা।
বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেক ব্যক্তিকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দালালরা। অনেকে তাদের এই ফাঁদে পা বাড়ান। পরে উন্নত সেবার নামে নানাভাবে খরচ হয় টাকা। তাদের এই ফাঁদে সবচেয়ে বেশি পড়েন গ্রাম থেকে আসা রোগী ও স্বজনরা।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে ছেলে সুমনকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সোলেমান মিয়া বলেন, হাসপাতালের গেট পর্যন্ত আসতেই শার্ট-প্যান্ট পরা কয়েকজন ভদ্রলোকের মতো জিগ্যেস করল রোগীর সমস্যা কি? বললাম, আমার ছেলের পেট ব্যাথা। পরে তারা মেডিকেলের হাসপাতালের নানা দুর্নাম করে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে চাইল। পাশাপাশি সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৪০ ভাগ ছাড় দেয়ার কথাও বলা হয়। কিন্তু তারা দালাল বুঝতে পেরে সঙ্গে যাইনি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের দালাল-প্রতারক চক্রকে ধরতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত আবেদন জানানোর পর এই অভিযান। বৃহত্তর ময়মনসিংহের অসহায় সাধারণ মানুষ যখন হাসপাতালে সেবা নিতে আসে তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে চক্রটি নানা ভাবে রোগি এবং তাদের স্বজনদের হয়রানি করে আসছিল। এই চক্রের ১৪জনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। জনস্বার্থে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
র্যাব-১৪’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামসুজ্জামান বলেন, আটককৃতরা হাসপাতালটিকে চারদিকে ব্লক করে রেখেছিল। গ্রামাঞ্চল থেকে রোগ আসলে তাদের টার্গেট করে হয়রানির মধ্যে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিত। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে রোগি ও তাদের স্বজনদের বেকায়দায় ফেলত। মূলত এই চক্রটিকে আইনের আওতায় এনে স্বস্তির লক্ষ্যে আমাদের এই অভিযান কার্যক্রম।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা.জাকিউল ইসলাম বলেন, এক হাজার শয্যার বিপরীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার। যাদের বেশিরভাগ সেবা নিতে এসে বিভিন্ন সময় দালালদের খপ্পরে পড়ে। এই অভিযানের ফলে দালালদের দৌরাত্ম কিছুটা হলেও কমবে। কারণ আমাদের পক্ষে বাহিরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সবসময় লক্ষ্য রাখা সম্ভব নয়। সেবা নিতে আসা মানুষজনকেও আরও সচেতন হতে হবে।