তিন-চার মাসের মধ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণে নজর দেবো : অর্থ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক : জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে নজর দেবো।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন অর্থ উপদেষ্টা।
আগামী সপ্তাহে শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেখানে আমাদের যাওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য হলো বাজেট সাপোর্ট ও কতগুলো প্রজেক্ট ওরিয়েন্টেড বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ওপেক ফান্ড আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করব। অর্থায়ন নিয়ে সেখানে আমাদের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি চুক্তি হতে পারে এবং ওপেক ফান্ডের সঙ্গেও হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা ওখানে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের সঙ্গেও আলাপ করব। তারা কক্সবাজারে কাজ করছে। এছাড়া ইউএস ট্রেজারির সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পে পেমেন্টের বিষয়ে আলোচনা হবে। এরইমধ্যে আমরা আলাপ করেছি। নিষেধাজ্ঞা আছে, তারপরও এ প্রকল্প নিয়ে বিশেষ কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এর বাইরে আমি সেখানকার বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে আলাপ করব। সেটা আমাদের এফবিসিসিআইয়ের মতো একটা সংগঠন। সেখানে বিশ্বের শীর্ষ ৭০টি কোম্পানি রয়েছে। তাদের কাছে এফডিআর ও আমাদের অর্থনীতির বিষয়ে শুনবো। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগকারী আটলান্টিক কাউন্সিলের সঙ্গেও যোগাযোগ করব।
তিনি বলেন, আমরা ইউএসএর সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সরকারের লেভেল, মাল্টিল্যাটারাল লেভেল বা বাইলেটারাল লেভেল ছাড়াও প্রাইভেট খাতের সঙ্গে যোগাযোগ করব। যেমন এনার্জি খাতের দু-একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ হতে পারে। আমরা এনার্জি আনব কি না সে বিষয়ে। কারণ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তো আমাদের ইউএস থেকে আমদানির বিষয়ে একটু প্রণোদনা দিতে হবে। কারণ আমরা রপ্তানি যা করি তার থেকে কম আমদানি করি। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, এরপর আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চয়ই আমরা আলাপ করব। তবে একসঙ্গে তো সব কিছু আসবে না। ইউএস’র বাণিজ্য প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছে। তারাও এসব বিষয়ে আলাপ করবেন। সব মিলিয়ে অর্থায়নসহ সবকিছু আমি আসার পর জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমাদের যে ট্রেড গ্যাপ আছে সেটা তো আমাদের আর্গুমেন্ট না। আমরা চাচ্ছি আমাদের যেন নরমাল ট্রেড হয়। বিশেষ করে জিএসপিটা আবার চালু করা যায় কি না। কারণ জিএসপিটা আমেরিকার বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইউরোপ, তুর্কির বাজারেও করা যায় কি না। একই সঙ্গে আমরা আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে নজর দেবো। আমাদের ব্র্যান্ড, কোয়ালিটি ও মার্কেটিংয়ের বিষয় রয়েছে। মোট কথা বাণিজ্য ইস্যুতে ইউএস’র সঙ্গে সম্পর্ক যেন আরও বেশি বিস্তার লাভ করতে পারে সেই চেষ্টাই থাকবে। সেই সুযোগটা আছে। কারণ চায়না অনেক কঠোর হয়েছে। এখন বাংলাদেশ সেখানে প্রবেশ করতে পারে।
জিএসপি সুবিধা একদিনে ইমপোজ করা হয়নি মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জিএসপির সঙ্গে লেবার ল’ ট্রেড ইউনিয়নের বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টেসের কোয়ালিটি ভালো। তবে মোটকথা হলো জিএসপি ইস্যুতে তাদের সিনেটে বিরাট একটা ইমপ্রেশন কাজ করে। ওরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কে কী কাজ করছে, কী রিফর্ম করছি এগুলো দেখে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি তাদের কাছ থেকে এনার্জি, মেশিনারিজ আমদানি করি, আমদানি বেশি করলেই তো গ্যাপটা কমবে। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে রপ্তানি করতে পারি। একই সঙ্গে তাদের দিক থেকেও যদি আমদানি করে, তবে গ্যাপ শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব না।