মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
জাতীয়লীড নিউজ

রূপপুর কেলেঙ্কারি : অভিযোগ শেখ হাসিনা, জয় ও টিউলিপের বিরুদ্ধে

বিশেষ সংবাদদাতা : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থপাচারের অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল এ অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে।

বিভিন্ন উন্মুক্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাতিজি টিউলিপ সিদ্দিক মিলে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রকল্প থেকে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের ব্যয় অতিরিক্ত দেখিয়ে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এছাড়া টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কিছু অভিযোগ উঠেছে। তার চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, যিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া কোম্পানি প্রচ্ছায়া লিমিটেড এবং ডেসটিনি গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অর্থ যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয় এবং যুক্তরাজ্যে জুমানা ইনভেস্টম অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।

এছাড়া, ব্রিটিশ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রাখার অভিযোগও উঠেছে।

রূপপুর প্রকল্পটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে শুরু হলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তা মারাত্মক বিতর্কিত হয়। যদি এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি দেশের জনস্বার্থ ও সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুতর আঘাত বলে বিবেচিত হবে।

এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় প্রথমবারের মতো সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম অর্থপাচারের সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে। পরবর্তীকালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য পাওয়া যায়।

তদন্তে জানা যায়, হংকং এবং কেম্যান আইল্যান্ডের বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এসব লেনদেন পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করে এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম এবং অর্থপাচারের প্রমাণ পায়।

এছাড়া মার্কিন বিচার বিভাগের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস বিশেষ এজেন্ট লা প্রেভটের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগেও তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৯টি প্রকল্পে এই দুর্নীতি হয়েছে, যার মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ তদন্ত দল এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন অফিস এবং অভিবাসন ও পাসপোর্ট বিভাগ থেকে সন্দেহভাজনদের প্রাথমিক পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে বিশেষ চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি এবং লেনদেনের বিবরণ সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা বাংলাদেশের আর্থিক খাত এবং সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *