বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আলোচিত সংবাদনেত্রকোনাব্রেকিং নিউজময়মনসিংহ

বন্যায় নেত্রকোণায় ২০০ কিলোমিটার সড়ক-সেতু ক্ষতিগ্রস্ত

নেত্রকোণায় সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও সেতু। বিকল্প সড়ক না থাকায় প্রতিদিনই মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে রাজধানী ঢাকাসহ দূরপাল্লার ভারী যানবাহন। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার রংছাতি, খারনৈ, বড়খাপন, পোগলা, কৈলাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক।

বন্যার পানির স্রোতে এসব সড়কের পিচের শুড়কি উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দের। এরমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কলমাকান্দা থেকে পাঁচগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ অংশ। পাশাপাশি বরুয়াকোনা পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

বরুয়াকোনা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর বারেক মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার ভাঙনটা দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ। আমাদের এলাকার ছাত্র-সাধারণ মানুষ সবাই এটা নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে আছি। বিশেষ করে বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হচ্ছে। একটা বাচ্চা স্কুল-প্রাইভেট মিলিয়ে দু-তিনবার যাতায়াত করে এই পথ দিয়ে। কিন্তু রাস্তা না থাকাতে এখানকার ছাত্রদের পড়াশোনার একটা ব্যাঘাত ঘটছে। এই জায়গায় বারবার বাঁধ দেওয়া হলেও কাজটা ভালোভাবে হয় না। যার কারণে বারবার ভেঙে যায়। এখন সরকার যদি একটা ভালো বাঁধের ব্যবস্থা বা একটা ব্রিজ করে দেয় তাহলে আমাদের উত্তরের অংশের এলাকার ভোগান্তিটা শেষ হবে।

একই গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের চিনাহালা মোড় থেকে বরুয়াকোনা বাজার পর্যন্ত একটা পাকা সড়ক ছিল। কিন্তু বর্তমানে একাধিকবার বন্যা হওয়ায় রাস্তাটার এমন বেহাল অবস্থা যে বোঝার উপায় নাই এর পূর্বে এখানে পাকা রাস্তা ছিল। রাস্তার কোথাও দুই ফিট আবার কোথাও তিন ফিট গর্তের তৈরি হয়েছে। আর আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, এই জায়গাটা একাধিকবার মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বাঁধটি কখনো স্থায়ী হয় না, বারবার ভেঙে যায়। এখান দিয়ে উত্তর এলাকার হাজার হাজার লোক আসা-যাওয়া করে। মানুষের যে ভোগান্তি এটার কোনো শেষ নেই। আমরা আশা করি জনগণের ভোগান্তি যেন নিরসন হয় এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানায়, এই রাস্তার যেন অনতিবিলম্বে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার মহাদেও নদীর ওপর নির্মিত রসুর সেতুর উভয় পাশের সড়কের সংযোগ স্থলের নিচের মাটি সরে গেছে। সড়কের ওপরের বালু ও ইটের খোয়া মিশ্রিত কংক্রিটের ঢালাই অংশ যে কোনো সময় ধসে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ি জনপদের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণ পিপাসুরাও ঘুরতে আসেন পর্যটন এলাকাখ্যাত পাহাড়ি জনপদ কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকায়।

বিকল্প সড়ক না থাকায় প্রতিদিনই মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে রাজধানী ঢাকাগামী বাসসহ দূরপাল্লার ভারী যানবাহন চলাচল করে এই সেতুর ওপর দিয়ে। জরুরি রোগী নিয়ে দ্রুত সময়ে যেতে পারছেন না উপজেলা সদরে। এলাকাবাসী বলছেন, প্রতি বছরই বন্যায় এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নেওয়া হয় না কোনো টেকসই উন্নয়ন। যার ফলে সারা বছর ভোগান্তি নিয়েই চলতে হয় এলাকাবাসীর।

স্থানীয় সাংবাদিক কাজল তালুকদার বলেন, এই ব্রিজটি আসলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কলমাকান্দা হলো পর্যটন সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। এই উপজেলাতে দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। পাশাপাশি এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত করে। এমনকি সুনামগঞ্জ এলাকার লোকজন এদিক দিয়ে যাতায়াত করেন। আমরা চাই সেতুটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়। না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

শেখ শামীম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এ সেতুটির দুই পাশেই অ্যাপ্রোচ সড়কের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিনিয়ত দূরপাল্লার বাসসহ ভারী যানবাহন চলাচল করে থাকে। এদিক দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এখন দ্রুত এই সেতুটি মেরামতের ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এখানে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট আমার জোরালো দাবি, এই সেতুটি অতি দ্রুত সংস্কার করা হোক।

নেত্রকোণা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিগত কিছুদিন আগে যে বন্যা হয়ে গেল ওখানে রাস্তার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্ত রোডের সঙ্গে কানেক্টিং পাঁচ গাওয়ের একটি রাস্তা। বেশ কয়েক জায়গায় ডিসকানেক্ট হয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেটি চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোডের মাটি নিচ থেকে সরে গিয়েছে। এতে করে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীতে পানি থাকায় আমরা এখনো সংস্কার কাজে হাত দিতে পারিনি। পানি কমে গেলেই আমরা কাজটি সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করব।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, অলরেডি আমরা সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ নামে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সেটি পাস হলে সেখানে আমরা নতুন একটি ব্রিজ করব এবং বরুয়াকোনা রাস্তার যে ভাঙা অংশ রয়েছে সেখানে আমি নিজেও পরিদর্শন করেছি। পাহাড়ি ঢলের কারণে ওই রাস্তাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমে গেলে ওই রাস্তাটাও আমরা মেরামত করে দেব। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুতই মেরামতের কাজ করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি ২৫০ কোটি টাকা রাস্তা সংস্কারে খরচ হতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *