বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আলোচিত সংবাদব্রেকিং নিউজস্বাস্থ্য

ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, শিশু মৃত্যুহার বাড়ছে

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শিশু জুবায়ের। শরীরে জ্বর কমছে না। পেটে ব্যাথা, কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না তার।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বিশেষায়িত ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। সেখানেই ৩৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন জুবায়ের। তার মতো ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শিশুদের এই ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এই ওয়ার্ডের ৩৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ১২ বছর বয়সী ওয়াসিম। ওয়াসিমের মা সীমা খাতুন বলছিলেন, ‘আমরা ঢাকার কল্যাণপুরে থাকি। ছেলের জ্বর উঠেছিল ১০৫ ডিগ্রিতে। টানা ৩ দিন ধরে এমন অবস্থা ছিল। আজ ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আমরা গরিব মানুষ, এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা শেষ। কী করবো বুঝতে পারছি না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছরে সারাদেশে এ পর্যন্ত এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৫৯০ জনে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৬ জনে। রোববার (৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২২৫ জন, যা একদিনে এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

‘ছেলের জ্বর উঠেছিল ১০৫ ডিগ্রিতে। টানা ৩ দিন ধরে এমন অবস্থা ছিল। আজ ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আমরা গরিব মানুষ, এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা শেষ। কী করবো বুঝতে পারছি না।’-ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ওয়াসিমের মা সীমা খাতুন

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে শিশু মৃত্যুর হারও। শিশু হাসপাতালের তথ্যসূত্রে জানা গেছে, এবার ডেঙ্গু রোগে বিগত ৫ বছরের মধ্যে শিশু আক্রান্তের হার কম থাকলেও মৃত্যুহার বেশি। এবার মোট ২৯৬ জন শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৫ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা গত ৬ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে মোট ১ হাজার ৪৫০ জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। সে বছর মারা যায় ১৮ জন শিশু, মৃত্যুহার ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২০ সালে মাত্র ৯৬ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এবং মারা যায় ১ জন। মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ০৪ শতাংশ। ২০২১ সালে মোট ১ হাজার ১০৭ জন শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয় এবং মারা যায় ১৭ জন। ফলে সে বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এবার ডেঙ্গু রোগে শিশু আক্রান্ত কম হলেও মৃত্যু হার কিন্তু বেশি। আমরা হাসপাতালে বিশেষায়িত ডেঙ্গু কর্নার খুলেছি। সেখানে গত তিন মাসে ২৯৬ জন শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে ৫টি শিশু মারা গেছে। বর্তমানে ৩৭ জন শিশুকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছি।-বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ) কিংকর ঘোষ

২০২২ সালে ডেঙ্গুতে শিশু মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মোট ১ হাজার ২৫২ জন শিশুর মধ্যে মারা যায় ২২ জন শিশু। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে মারা যায় ২৩ জন শিশু। চিকিৎসা নেয় মোট ২ হাজার ৩৩ জন শিশু। মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ) কিংকর ঘোষ বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু রোগে শিশু আক্রান্ত কম হলেও মৃত্যুহার কিন্তু বেশি। আমরা হাসপাতালে বিশেষায়িত ডেঙ্গু কর্নার খুলেছি। সেখানে গত তিন মাসে ২৯৬ জন শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে ৫টি শিশু মারা গেছে। বর্তমানে ৩৭ জন শিশুকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছি।’ তবে সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে শুরু হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৯ মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা ৯ মাসের মোট মৃত্যুর প্রায় ৫০ শতাংশ। এ অবস্থায় অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *