শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
আলোচিত সংবাদব্রেকিং নিউজময়মনসিংহশেরপুর

শেরপুরে পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ, রান্না-খাওয়া নিয়ে দুর্ভোগ

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজার মানুষ। টানা দুদিন পর চার নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ কমেনি নিম্নাঞ্চলের মানুষের। রান্না-খাওয়া ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শেরপুরে বৃষ্টিপাত কমলেও বেড়েছে উজানে। যে কারণে এখনো নদীর পানি কমা শুরু করেনি। উজানে বৃষ্টির অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

চারদিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও অনেক এলাকায় এখনো পৌঁছায়নি সরকারি সহযোগিতা। চুলা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সম্ভব হচ্ছে না রান্না করা। শুকনা খাবারই একমাত্র ভরসা। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। এতে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলার কালিনগর, দাড়িয়ার পার, কান্দুলি, চেঙ্গুরিয়াসহ ২০ গ্রাম এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।

এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় চিড়া-মুড়ি ও শুকনা খাবারে ভরসা করতে হচ্ছে তাদের। গ্রামীণ কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কর্মস্থলে যেতে পারছেন না পানিবন্দি এলাকার মানুষ। পানি প্রবেশ করায় অন্তত ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো নির্দেশনা না থাকায় দুর্ভোগের মধ্যেই এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছন পরীক্ষার্থীরা।

ঝিনাইগাতী উপজেলার দড়িকালিনগর এলাকার নাঈম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। সদরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। তারপরও পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে। অথচ বন্যার কারণে প্রস্তুতি ভালো হয়নি। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে পরীক্ষা নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগেরভিটা এলাকার একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এরমধ্যেই আমাদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলছে।’

আহম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে। এজন্য শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেকটা কম।’

দারিয়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম। তিনদিন ধরে তার বাড়ির উঠানে পানি। তিনি বলেন, ‘চুলায় পানি থাকায় রান্না করতে পারছি না। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এখন পর্যন্ত মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ আমাদের দেখতে আসেনি। আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। ঘরের চিড়া-মুড়ি সবশেষ।’

কান্দুলি এলাকার আছিয়া খাতুন বলেন, ‘গরু-ছাগল নিয়ে এক ঘরে ১০ জন মানুষ থাকছি। খুব বিপদের মধ্যে আছি। এখনো সরকারের কোনো সাহায্য আমরা পাইনি। এই অবস্থা আর কয়দিন থাকলে আমরা খুব বিপদের মধ্যে পড়ে যাবো।’

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, আমরা এরইমধ্যে নদীভাঙন এলাকাগুলোতে কাজ শুরু করেছি। তবে ভাঙা অংশ মেরামত করলে দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের মধ্যে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব সহায়তা পৌঁছে যাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *