নিয়মিত দুধপানে কমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
‘দুধপান নিয়ে আমাদের মাঝে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন দুধ খেলে ক্যান্সার হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বরং দুধে উপস্থিত কিছু উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া দুধ ডায়াবেটিস রোগের জন্যও উপকারী। দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ কম থাকে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী। শনিবার (১ জুন) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ওই সভার আয়োজন করে বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই মনে করেন দুধ খেলে গ্যাস্ট্রিক ও পেট খারাপসহ অন্যান্য সমস্যা হয়। দুধের মধ্যে গ্যাস্ট্রিক বা অন্যান্য সমস্যা হওয়ার মতো কোনো উপাদান নেই। মূলত ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার জন্য এই সমস্যাগুলো কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায়। ছোটবেলা থেকে দুধ খাওয়ার অভ্যাস না থাকার কারণে এই সমস্যাটি হয়। তবে এর সমাধান হিসেবে ল্যাকটোজ ছাড়া দুধ গ্রহণ বা বিভিন্ন চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে। দুধ গরম করলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয় এটিও একটি ভিত্তিহীন ধারণা। দুধে উপস্থিত ক্ষতিকর জীবানুকে ধ্বংস করার জন্য তাপ দেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের প্রয়োজনীয়তা, বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপনের ইতিহাস, বর্তমান পরিস্থিতি ও টেকসই খাদ্য নিরাপত্তায় দুধের অবদান নিয়ে আলোচনা করেন ড. মোহাম্মদ সোহেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. এ. কে. এম. মাসুমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছাজেদা আখতার ও নেসলে বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের লিগ্যাল রেগুলেটরি অ্যান্ড সায়েন্টিফিক পরিচালক দেবব্রত রায় চৌধুরী।
এছাড়াও বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এম. এ. সামাদ খান, বিভিন্ন দুগ্ধজাত শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, মানসম্পন্ন খাবারের কথা বলতে গেলে শুরুতেই দুধের নামটি আসবে। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুণ দুধে উপস্থিত। এ কারণেই পৃথিবীর অনেক দেশে দুধ পানির চেয়ে সহজলভ্য। দুধকে সকলের কাছে সহজলভ্য করার জন্য আমাদের দেশেও এ রকম পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বাজারে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পানীয় থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। দুগ্ধজাত পণ্যের মাধ্যমে পানীয়র চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগে দিবসটির শুরুতেই সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মোট প্রায় ১ হাজার ৬০০ শিশুকে দুধ পান করানো হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পশুপালন অনুষদ থেকে আনন্দ র্যালি বের করা হয়।
এছাড়া দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল ৩টা থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার পরামর্শ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।