অস্থির সবজির বাজার, মাংস ও ডিমের দামও চড়া
ঈদের পর থেকেই বাড়ছিল সবজির দাম। একই সাথে চড়তে থাকে সব ধরনের মাংস ও ডিমের দামও। মাঝে সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে গরমের দোহাই দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। এখন বৃষ্টি শুরু হলেও দাম তো কমেইনি উল্টো বেড়েছে। কিন্তু এখন দাম বাড়ার কারণের আর কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় না ব্যবসায়ীদের কাছে। একই অবস্থা মাংস ও ডিম বিক্রেতাদের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেড়ে গেলে আমাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। দাম বাড়ানো-কমানো আমাদের হাতে নেই। আমরা কেবলই কিনে এনে কিছু লাভ রেখে বিক্রি করি। অন্যদিকে বাজার করতে আসা ক্রেতারা সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এভাবে তো চলতে পারে না।
শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাজারের বর্তমান এ চিত্র।
বাজারে দিন দিন সবজির দাম বেড়েই চলছে। বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে এই দাম। কিন্তু কমছে না আর কিছুতেই। আজকের বাজারে টমেটো ৫০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, উচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, করল্লা ৬০-৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৬০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুরলতি ৮০-১০০ টাকা, কচুরমুখী ১৪০-১৬০ টাকা, সজনে ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, কোনও সবজির দাম তো কমেইনি বরং বেড়েছে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত। অল্প মূল্যের সবজি হিসেবে পরিচিত পেঁপে আজকে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। এদিকে কাঁচামরিচের দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি হলেও আজ তা ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সবজিবিক্রেতা রাজিব বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করছে, তো আমরা তো কম দামে বিক্রি করতে পারি না। আমরা সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি।
বাজার করতে আসা খলিলুর রহমান বলেন, সব সবজিরই দাম বেশি কীভাবে কিনবো? যেই পেঁপে ২০/৩০ টাকা কেজি কিনতাম সেই পেঁপে আজকে ১০০ টাকা কেজি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক ক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, সবজির দাম যেভাবে বাড়ছে এভাবে চলতে পারে না। এর একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে আজকের বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৪০ টাকা, ভারতীয় আদা ২৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় দেশি রসুনের দাম আবারও বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা করে।
এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৮০০-২৪০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কই মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০- ১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আজকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে কক মুরগি, দেশি মুরগি, লেয়ার মুরগির দামও। আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২৫ টাকা, কক মুরগি ৩৭০-৩৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩৫ টাকা, দেশি মুরগি ৬৭০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১৪০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায় সব ধরনের মাংসের দামই বেড়েছে। আর ডিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে প্রতি ডজনে ২০ টাকা করে।
ডিমের দাম হুট করেই কেন বেড়ে যাচ্ছে— জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তারা বলেন, আমরা গতকাল যে দামে কিনে এনেছি আজকে সে দামে কিনতে পারছি না। তাদের (পাইকারি বিক্রেতা) সাথে কথা বলতে গেলে তারা আমাদের বলেন, ‘তোমাদের পোষালে নাও, না হলে নিও না।’ তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আমাদের তো ব্যবসা করে খেতে হবে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে খোঁজ নেওয়া হয় পাইকারি বাজারে। জানতে চাওয়া হয়, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ। এসময় মিরপুর ১ নম্বর বাজারের ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ী রাজিব পুষ্টি বিতানের মো. রাজিব বলেন, আজকে আমরা ১০০ পিস সাদা ডিম ১০৬০ টাকা ও লাল ডিম ১১৩০ করে বিক্রি করছি। চাহিদা অনুযায়ী ডিমের ঘাটতি আছে তাই ডিমের দাম বেড়েছে। এই মুহূর্তে যে পরিমাণ ডিম আমাদের প্রয়োজন সেটা নেই। গরমে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। আবার মুরগির খাবারের দাম বেশি, তাই ডিম মাংসের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব কারনেই ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এগুলো তো পচনশীল পণ্য আমরা এটা স্টক করে রেখে দিতে পারবো না যে সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করবো। দ্রুতই ডিম বিক্রি করে দিতে হয়। এবার গরমেও অনেক ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকে প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৯০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।