নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়া জয় বাংলাদেশের
টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে যেন বেরই হতে পারছিল না বাংলাদেশ। অবশেষে ২০ ওভারের ক্রিকেটে কিউইদের হারানোর স্বাদ পেল বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। কোল ম্যাককনির বলে চার মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিকুর রহিম।
জয়ের জন্য ৬১ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন নাইম শেখ। কোল ম্যাককনির ফ্লাইট ডেলিভারিতে শর্ট কভার দিয়ে খেলতে গিয়ে হেনরি নিকোলসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
নাইমের বিদায়ের পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। এজাজ প্যাটেলের ফ্লাইটেট ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। নাইমের মতো তিনিও ফিরেছেন মাত্র ১ রান করে।
৭ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। তাঁদের দুজনের জুটি থেকে আসে ৩০ রান। রাচিন রবীন্দ্রর বলে স্টাম্পিং হয়ে সাকিব ফিরলে ভাঙে তাঁদের এই জুটি। আউট হওয়ার আগে ২ চারে ৩৩ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন সাকিব।
এরপর মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ মিলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। তাঁদের দুজনে জুটি থেকে আসে ২৫ রান। মুশফিক ১৬ এবং মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ১৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র, প্যাটেল ও ম্যাককনি।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই অভিষিক্ত রাচিন রবীন্দ্রকে হারায় কিউইরা। শেখ মেহেদির গুড লেন্থের বল বুঝে উঠতে না পারায় বোলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রবীন্দ্র। নিজের অভিষেক ম্যাচেই গোল্ডেন ডাক মারেন তরুণ এই অলরাউন্ডার।
অভিষেকে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় ওপেনার হিসেবে ডাক মারেন রবীন্দ্র। বাঁহাতি এই ওপেনারের বিদায়ের পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন উইল ইয়াং। সাকিব আল হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে এজ হয়ে বোল্ড হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিউই শিবিরে বড় আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ।
নিজের প্রথম ওভারেই কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও টম বান্ডেলকে ফেরান তিনি। নাসুমের সেই ওভারের তৃতীয় বলে স্লগ সুইপ খেলেন গ্র্যান্ডহোম। তবে টাইমিং না হওয়া ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা নাইম শেখের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১ রান করা এই ব্যাটসম্যান। সেই ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছেন ব্লান্ডেল।
স্টাম্পের ভেতরের বলে লাইন মিস করে বোল্ড আউট হয়েছেন ২ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। মাত্র ৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে কিউইদের টেনে তোলার চেষ্টা করেন টম লাথাম ও হেনরি নিকোলস। তাঁদের দুজনের জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
ডানহাতি এই পেসারের লেগ সাইডের বল তুলে মারতে গিয়ে ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে থাকা নাসুমের হাতে ক্যাচ তুলে লাথাম। ১৮ রান করে কিউই অধিনায়ক সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৩৪ রানের জুটি। পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন কল ম্যাককনি। রবীন্দ্রর মতো তিনিও অভিষেকে ডাক মেরেছেন।
সাকিবের বলে তুলে মারতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ম্যাককনি। দলের বিপর্যয়ে থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি নিকোলস। সাইফউদ্দিনের বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে থাকা মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ২৪ বলে ১৮ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ডগ ব্রাসওয়েল ও এজাজ প্যাটেলরাও থিতু হতে পারেননি। শেষ দিকে আর কোন ব্যাটসম্যানই সেভাবে দাঁড়াতে না পারায় মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। যা তাঁদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে যৌথভাবে দলীয় সর্বনিম্ন রান। এর আগে ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬০ রানে অল আউট হয়েছিল তাঁরা।
কিউইরা ৬০ রানে অল আউট হওয়ায় প্রথম টি-টোয়েন্টি জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৬১ রান। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ তিনটি এবং দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব, নাসুম, সাইফউদ্দিন। এ ছাড়া একটি উইকেট নিয়েছেন মেহেদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
নিউজিল্যান্ড- ৬০/১০ (ওভার ১৬.৫) (লাথাম ১৮, নিকোলস ১৮, ইয়াং ৫, মুস্তাফিজ ৩/১৩, সাইফউদ্দিন ২/৭, মেহেদি ১/১৫, সাকিব ২/১০, নাসুম ২/৫)
বাংলাদেশ- ৭/২ (ওভার ৩) (সাকিব ৫, লিটন ১)