শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
আলোচিত সংবাদজাতীয়বিশেষ সংবাদব্রেকিং নিউজ

নদীভাঙনে নিঃস্ব অনেক পরিবার

দেশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। নদীভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়া জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর।

সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদীভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে শেরপুরের নকলা উপজেলার বাছুর আলগী গ্রামের প্রতিবন্ধী হাবিজা বেগমের অসহায় পরিবার। গাইবান্ধার নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকা ও চরাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে তিস্তার বাঁধের ভাঙন অব্যাহত আছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। তবে খোয়াই ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদী ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, যমুনা নদীর ফুলছড়ি, সাঘাটা, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, পোড়াবাড়ী, মথুরা ও আরিচা পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ওপরে রয়েছে। এ ছাড়া ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে, ব্রহ্মপুত্র চিলমারীতে, আত্রাই বাঘাবাড়ীতে, ধলেশ্বরী এলাসিনে ও পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের চার হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন, বোনা আমন, আগাম সবজি, আখ, বীজতলা ও বাদাম।

শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শাখা দশানী নদীর ভাঙনে এরই মধ্যে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই নদীর পারে অন্যের জমিতে জরাজীর্ণ ভাঙা ঘরে বাস করে শারীরিক প্রতিবন্ধী হাবিজার পরিবার। নদীর ভাঙনে এরই মধ্যে টিউবওয়েল ও রান্নাঘরের পাশ পর্যন্ত বিলীনের পথে।

গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঘাঘট নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখন বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার এবং করতোয়া নদীর পানি বিপত্সীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নীলফামারীর তিস্তার পানির তোড়ে ব্যারাজের ভাটিতে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ভেণ্ডাবাড়ী গ্রামে নদীর ২ নম্বর স্পার বাঁধটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বাঁধের দেড় শ মিটার ভেঙে ওই ইউনিয়নের ভাবনচুর, দক্ষিণ সোনাখুলি, ভেণ্ডাবাড়ি ও কুটিপাড়া গুচ্ছগ্রাম (আশ্রয়ণ প্রকল্প) প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় অসংখ্য আবাদি জমি। সোমবার সকাল থেকে ওই ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করা হলেও তা অব্যাহত আছে।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলার পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। রোপা আমনসহ ১৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ ও খাদ্যসংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে চরের মানুষ। গোচারণ ভূমি ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের তীব্র সংকট।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *