হাসিনা নিজেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, তবে বাস্তবতা ভিন্ন : আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নতুন বাংলাদেশ শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পুরো সরকারব্যবস্থার সংস্কার হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করা হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলছে- নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার শেষ করার প্রস্তুতি।
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৯) জাতীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্মেলনের ফাঁকে আল জাজিরাকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস। রবিবার (১৭ নভেম্বর) এই ভিডিও সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করে আল-জাজিরা। সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ যেসব সংকট মোকাবিলা করছে তা নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস। পাশাপাশি বাংলাদেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, আগামী নির্বাচন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। কখন হবে নির্বাচন? এ বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনও ভাবনা আছে কি না? অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সীমা কী হতে পারে?
এসব প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার পাঁচ বছরের হয়। নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়।’
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা আরও কম হতে পারে। এটা পুরোটা নির্ভর করছে মানুষ কী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপর। যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায় সংস্কার ভুলে যাও, নির্বাচন দাও। তাহলে সেটাই করা হবে।’
তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে তিনি কি চার বছর থাকছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বলেছি, সরকারের সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে চার বছর। তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা।’
সাক্ষাৎকারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও এসেছে। বাংলাদেশের বন্যা তথা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে হাসিনা সরকারের গত ১৬ বছরের শাসনের দুর্নীতি জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশের পানির উৎস অন্য দেশগুলো। ফলে সেই দেশগুলোর সঙ্গে পানি ব্যবস্থানার ওপর জোর দিয়েছেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্র দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি। অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু দেশে নয়, পুরো বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে একটি/দুটি কর্মসূচি নয় বরং পুরো বিশ্ববাসীকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শেখ হাসিনা বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। ভারত থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয়।’ ভারতকে তার এসব বিষয় সম্পর্কে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ভারতকে বলা হয়েছে, তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে ভারতের কাছেই আবার অভিযোগ করা হবে।
ড. ইউনূস আরও বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে। অথচ ভারতই তাকে আশ্রয় দিয়েছে। আশ্রয়দাতাই তাকে সাবেক বলছে।’
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের তীব্র জলবায়ু ঝুঁকি, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ আছে কি না? যদিও ড. ইউনূস একসময় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন, তবে তা নিয়ে চাপ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। অবশ্য বিভিন্ন দিক থেকে তার নেতৃত্বের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন ড. ইউনূস।