শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
আলোচিত সংবাদজেলা সংবাদব্রেকিং নিউজ

সুনামগঞ্জে বানবাসি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছেই

‘পানির অপর নাম জীবন কথাটি যেন সুনামগঞ্জের জন্য নয়। সুনামগঞ্জে পানি মানে বিষাদ। যেদিন ঘরে পানি প্রবেশ করে সেদিন ছিল ঈদ। সকালে ঘুম থেকে উঠে আনন্দ করার কথা থাকলেও স্বামী-সন্তান নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করতে হয়েছে। আমাদের কষ্ট না হয় আমরা মেনে নিলাম, কিন্তু মা হয়ে শিশুদের কষ্ট তো আর মানা যায় না। পেটে নেই পর্যাপ্ত খাবার। নেই সুপেয় পানির মজুত। এভাবে কি বাঁচা যায়। পানির অভাবে বাধ্য হয়ে বানের জলে তৃষ্ণা মেটাচ্ছি।’

কথাগুলা বলছিলেন সুনামগঞ্জ পৌর কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মেহেরজান বিবি। এমন অবস্থা শুধু মেহেরজানের নয়, সুনামগঞ্জের ৫৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে আছে।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ কেন্দ্রে আশ্রিত ষাটোর্ধ্ব আহাদ মিয়া বলেন, আমাদের ঘরের ওপর দিয়ে গেছে প্রবল স্রোত। স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে বসতঘর। বাড়ির পাশের রাস্তায় ছিলাম প্রথম দিন। যে হারে বৃষ্টি হয়েছে যে রাস্তায় রাত কাটিয়েছি তা তলিয়ে গেছে। পরে উপায় না দেখে এখানে চলে আসি। এমন করে ২০২২ বন্যায় সব নিঃস্ব হয়েছিল। বার বার এমন অবস্থা কি সহ্য করা যায়। আমাদের দিকে কেন সরকার দৃষ্টি দেয় না। কবে মিলবে এমন অবস্থা থেকে মুক্তি।

গত ১৫ মে থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি। দুই দিনের ব্যবধানে সুনামগঞ্জের ২৬টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে সুনামগঞ্জের ৪টি পৌরসভাসহ ১২টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ।

শহরের পাশেই ইসলামপুর গ্রাম। ঝাওয়ার হাওরের তীরবর্তী এই গ্রামে নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বন্যা আক্রান্ত মানুষজন থাকছেন বাড়িতেই।

হাওর ঘুরে দেখা যায়, সুলেমান মিয়া নিজ বসতঘরের কাদা পানির মাঝে বসেই খাচ্ছেন পান্তা ভাত। পান্তা ভাত খাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘরে চাল ছাড়া কিছু নেই। কিছু সবজি ছিল, যা দুদিন খেয়েছি। এখন আর কিছুই নেই। তাই পান্তা ভাতই টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

সুলেমান মিয়ার বাড়ির পাশেই থাকেন রুকেয়া বিবি। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই এই পরিবারের। তিনি বলেন, স্বামী ঢাকায় রিকশা চালান। বন্যার দ্বিতীয় দিনে চুলায় পানি ঢুকে। এরপর থেকে আজ ছয় দিন চুলা জ্বলেনি। বাচ্চারা খাবার খেতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ছোট ছেলেটার শরীর খারাপ। না পারছি বের হতে না পারছি ছেলেটাকে ডাক্তার দেখাতে। সুপেয় পানির অভাবে হাঁসফাঁস অবস্থা আমাদের।

সপ্তাহ ধরে চলা এই বন্যায় তলিয়ে গেছে গ্রামের অধিকাংশ টিউবওয়েল। রান্নাঘর ও রান্নার উপকরণ ভিজে যাওয়ায় চুলায় আগুন জ্বলেনি দীর্ঘদিন ধরে অনেকের ঘরে। এতে সুপেয় পানির অভাবে নাজুক অবস্থায় রয়েছেন এই গ্রামের শতাধিক পানিবন্দি পরিবার।

সুনামগঞ্জ জেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আনুমানিক ১২ হাজার নলকূপ আংশিক ও তিন হাজার নলকূপ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বন্যায়। এছাড়াও আনুমানিক ৫০ হাজার শৌচাগার আংশিক ও ১৫ হাজার শৌচাগার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ খালেদুল ইসলাম জানান, তার কাছে ১৫ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত আছে। এর মধ্যে আনুমানিক তিন লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইউএনও এবং পিআইওদের মাধ্যমে বানভাসিদের মাঝে বিতরণ করেছেন। এছাড়াও দুটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে যা ঘণ্টায় ৬০০ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ করবে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক এটি মাঠে কাজ করছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *