সংসদ ভেঙে যাওয়ায় সংবিধানে ভোটের শেষ সময় ৪ নভেম্বর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা না থাকায় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এখন ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা চলে এসেছে।
তবে এই সময়ের মধ্যেই গঠন করতে হবে অন্তবর্তীকালীন সরকারও।
সংবিধানের ১২৩ (৩)(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে।
নির্বাচনকালীন সরকারের আইনি বৈধতা নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা একমত হলেও, ভোটের সময় নিয়ে ভিন্নমত পাওয়া গেছে।
কেউ বলছেন, ৯০ দিনের মধ্যে করতে পারে ভালো। তবে না করতে পারলে কিছুটা সমঢ বাড়াতে পারেন রাষ্ট্রপতি। কেউ বলছেন, সময় বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এতে অনির্বাচিত সরকার থেকে যেতে পারে। আবার কেউ বলছেন দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে নির্বাচন দেওয়া উচিত হবে।
৯০ দিনের খু্ব বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশে থাকলে আরেকজন নতুন প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত তিনিই দায়িত্ব পালন করতেন। এক্ষেত্রে তার অধীনেই নির্বাচনটা করা যেত। সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদের বিধান এটা। তবে তিনি যেহেতু দেশ ছেড়ে গেছেন, এক্ষেত্রে একটা প্রক্রিয়ায় তো যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি তো নিজে নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন না। তাই তিনি তার ইনহেরেন্ট ক্ষমতা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়োগ দিতে পারবেন অধ্যাদেশের মাধ্যমে। পরে সংসদ গঠন সেটার বৈধতা নিয়ে নেবেন।
তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে যাওয়ায় ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অতীতে কিন্তু আমরা এই সময়ের মধ্যে পারিনি। তখন রাষ্ট্রপতি অন্তর্ববর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ বাড়াতে পারবেন।
এছাড়া নতুন নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকাও প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকেও সময় দিতে হবে। কাজেই ৯০ দিনের মধ্যে ভোট না করা গেলেও সময়টা বেশি দেওয়াও ঠিক হবে না।
সময় নিয়ে নির্বাচন দিলে আন্দোলনের সুফল আসবে:
ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারীও প্রায় একই কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ায় কোনো আইন নেই নির্বাচনকালীন বা অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের। এইটা একটা সংকট। তবে রাষ্ট্রকে তো সংকট কাটাতে হবে। তাই এখানে নেসেসিটি অব ল বিষয়টা চলে আসে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইনটেরিন বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়োগ দেবেন। যে সরকার কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে নির্বাচন তড়িঘড়ি না করে একটু সময় নিয়ে করার পক্ষে তিনি। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিলে যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের জন্যও ভালো হবে না। কেননা, দেশের প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই এদের আগের সংশোধন করতে হবে। না হলে যে লক্ষ্য নিয়ে ছাত্র জনতা আন্দোলন করে অভ্যুত্থান করেছে, তার সুফল আসবে না৷
তিরি বলেন, নির্বাচন হলে হয়তো বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন দিয়ে সরকার চালাতে পারবে না। তাই সবার স্বার্থেই সময় নিয়ে নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ করতে পারবেন। এতে সংবিধানের ব্যত্যয় হবে না।
যথা সময়ে ভোট না দিলে অনির্বাচিত সরকার থেকে যাবে:
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ অবশ্য যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের পক্ষে। তিনি বলেন, নির্বাচন যথা সময়ে না হলে অনির্বাচিত সরকার এসে যায়। আর অনির্বাচিত সরকার কেউ চায় না। তাই ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করে ফেলা উচিত। ভোটার তালিকা করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
অন্তর্ববর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে বিষয়টি না থাকলেও কি হবে। আইনের তো প্রয়োজন এখন। তাই রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা বলে এটা গঠন করতে পারবেন।
সোমবার (৬ আগস্ট) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। মন্ত্রিসভার অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। সরকার প্রধানের পদত্যাগ করায় সংবিধান অনুযায়ী পুরো মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা দ্রুত অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার প্রস্তাব করেন। রাষ্ট্রপতি অন্যদলগুলোর দেওয়া প্রস্তাব থেকে গঠন করবেন নির্বাচনকালীন সরকার।