রবিবার, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
রবিবার, এপ্রিল ১৩, ২০২৫

শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে হাইব্রীড ধান বীজ উৎপাদন শুরু

শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে হাইব্রীড ধান বীজ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবছর ৭৫০ একর জমিতে চীনা জাতের ঋ১ জাতের হাইব্রীড ধান থেকে ৭০০ টন বীজ ধান পাওয়া যাবে। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসাইন তুলিপ, নালিতাবাড়ি উপজেলায় কফি চাষে সফলতার পর কাজ করছেন চীনা জাতের ঋ১ বোরো হাইব্রীড বীজ ধান নিয়ে। ইতিমধ্যে তিনি কৃষিবিদ গ্রুপের সহযোগীতায় নালিতাবাড়ি সদর ইউনিয়নের খালভাঙ্গা গ্রামে ৩৩ একর জমিতে ঋ১ বোরো হাইব্রীড জাতের ধানের চাষ করেছেন। তুলিপ জানান, জমি লিজ, বীজ ধান ক্রয়, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং শ্রমিক খরচসহ একরে মোট খরচ হবে ১লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

ধান কাটা, মাড়াই করে বীজ ধান সংগ্রহ করে বিক্রি পর্যন্ত সব খরচ বাদ দিয়ে একর প্রতি তার লাভ থাকবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এদিকে নালিতাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ২০২৪ সালে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১ম বারের পরীক্ষামূলকভাবে হাইব্রীড বীজ ধান উৎপাদন শুরু হয়। বাম্পার ফলন হওয়ায় চলতি বছর ব্যক্তি উদ্যোগ ছাড়াও কৃষিবিদ গ্রুপ , লাল তীর, সিনজেনটা, ইস্পাহানী, মদীনা সিডসহ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান চীনা ঋ১ বোরো হাইব্রীড জাতের বীজ ধানের চাষ করেছে।

কৃষি অফিস আরো জানায় , এই জাতের ধান গাছে তুলনামূলক রোগ বালাই অনেক কম। তাই অন্যান্য হাইব্রীড জাতের ধানের তুলনায় চীনা ঋ১ বোরো হাইব্রীড জাতের বীজ ধানে একরে গড় ফলন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২’শ কেজি। এছাড়া সাধারন চাষে এই ধানে একরে গড় ফলন ১১০ থেকে ১২০ মন।

স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম (৪৮) বলেন,আমরা প্রতিবছর বোরো আবাদে নানা জাতের হাইব্রীড ধান চাষ করি। একেক জাতের ধানের একেক রকম ফলন হয়। তবে এবছর নিজ উপজেলায় উন্নত জাতের হাইব্রীড বীজ ধান উৎপাদন হওয়ায় আমরা অনেক আশাবাদী। কৃষক ছামেদুল হক (৫০) জানান, আমাদের নিজ গ্রামে হাইব্রীড ধানের বীজ উৎপাদন হচ্ছে।এবিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমরা আগামী বছর এই হাইব্রীড ধান চাষ করব। কৃষি শ্রমিক মো. মামুন মিয়া বলেন, ধান বীজ উৎপাদনের জমিতে আমরা ৭জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করি। যদি সামনের বছর আরো বেশি জমিতে হাইব্রীড বীজ ধানের চাষ হয় তাহলে গ্রামের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

এব্যাপারে নালিতাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ জানান, একসময় বাংলাদেশে চাষকৃত হাইব্রীড বীজ ধান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো।

এখন উন্নত জাতের হাইব্রীড বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে অন্যান্য জেলার মত শেরপুরে চীনা ঋ১ বোরো হাইব্রীড জাতের বীজ ধান উৎপাদন শুরু হয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগীতায় আরো বেশি জমিতে হাইব্রীড জাতের বীজ ধান উৎপাদন করা গেলে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বাসস’কে জানান, স্থানীয় কৃষক ছাড়াও শেরপুরে হাইব্রীড বীজ ধান উৎপাদনে আগ্রহী বেসরকারি নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস বীজ ধান উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায্য মূল্যে রাসায়নিক সার ও সেচ সুবিধা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে।

হাইব্রীড জাতের এই বীজ ধানের ভাল ফলন হলে নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় বিক্রি করা সম্ভব। লাভবান হলে জেলায় হাইব্রীড জাতের বীজ ধান চাষে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হবে। জেলার কৃষিতে তৈরি হবে নতুন এক সম্ভাবনার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *