শেরপুরের মায়াবী লেকে ছুটছেন ভ্রমণপিপাসুরা
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির জেলা শেরপুর। ভারত সীমান্তবর্তী এই জেলায় রয়েছে মধুটিলা ইকোপার্ক, গজনী অবকাশ, নয়াবাড়ির টিলা, নাকুগাঁও স্থলবন্দরসহ নানা পর্যটন কেন্দ্র। এরই মধ্যে জেলায় নতুন আরেকটি স্থান ভ্রমণপিপাসুদের নজর কেড়েছে। জায়গাটির নাম মায়াবী লেক। পূর্বে যেটি বোগাগুছা নামে পরিচিত ছিল।
জানা যায়, কয়েক মাস আগে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ঘুরতে গিয়েছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার তাওয়াকুচা গ্রামের মায়াবী লেকে। তারা লেকের দৃশ্য ধারণ করে ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ করেন। এরপর মুহূর্তেই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।
এরপর থেকেই ভিড় বাড়তে তাকে উঁচুনিচু পাহাড়, সবুজ বন আর চারদিকে লেকবিশিষ্ট এই মায়াবী লেকে। তবে সামাজিক বনায়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রাণীর জণ্য জেলা প্রশাসন এটিকে বন্ধ ঘোষণা করে। তবু আশপাশে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।
এ লেকের ওপরে সুবিশাল নীল আকাশ আর নিচে সবুজ পাহাড়ের কোলে টলটলে জলরাশি। কালো জলে হঠাৎ তাকালে মনে হবে আকাশ যেন জলে নেমে এসেছে, পেতেছে গভীর মিতালি। চোখ ধাঁধিয়ে মন কেড়ে নেওয়া এ জলরাশি মায়াবী লেকের। পাখির চোখে সবুজ পাহাড়ঘেরা এ লেককে যে কেউ ভুল করে সুইজারল্যান্ড বা কাশ্মীরের কোনো এলাকা মনে করতে পারেন। সবচেয়ে বড় পাহাড়ে উঠলে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের চূড়া।
শেরপুর জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে তাওয়াকুচা নামক স্থানে অবস্থিত মায়াবী লেক। পিচঢালা সড়ক দিয়ে মায়াবী লেকে আসতে আসতে দুচোখে ধরা দেবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ধানক্ষেত, পাহাড়ঘেরা নদী, দিগন্তজোড়া মাঠ আর গ্রামীণ পরিবেশ। আরও এগোলে মন কাড়বে সড়কের দুই ধারে ঘন বন, ছোট ছোট টিলা। তাওয়াকুচা এলাকায় এসে মেঠোপথে হাঁটতে হবে প্রায় তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। এরপর দেখা মিলবে কাঙ্ক্ষিত মায়াবী লেকের।
যেভাবে যাবেন : রাজধানী ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে যেকোনো বাসে করে আসতে পারেন শেরপুর জেলায়। এরপর শেরপুর শহর থেকে সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যেতে হবে ঝিনাইগাতি উপজেলায়। ঝিনাইগাতি বাজার হয়ে ১০ কিলোমিটারের পথ গুরুচরন দুধনই। তারপর সীমান্ত সড়কপথে সোজা পশ্চিমে রাস্তা ধরে তাওয়াকুঁচা।
বালিঝুড়ি বাজারের একটু আগে তাওয়াকুঁচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র তিন কিলোমিটারের পথ। রাস্তা একটু কাঁচা থাকায় যেতে পারেন বাইকে। তবে ভারী যানবাহন বা প্রাইভেট কার নিয়ে প্রবেশ করলে আটকা পড়তে পারেন খানাখন্দে।
মায়াবী লেকে কথা হয় ঘুরতে আসা মো. রুবেলের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাশের জেলা জামালপুরে তারা বাড়ি। তিনি আমাদের জামালপুর ফেসবুক গ্রুপের শেরপুরের মায়াবী লেকের ছবি ও ভিডিও দেখে আকৃষ্ট হন। তাই তিনি ঘুরতে এসেছেন এই লেকে। রুবেল আরও বলেন, এখানে এসে লেকের মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি পরিবেশ ও স্বচ্ছ জলরাশি দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।
হাসি আক্তার নামের একজন বলেন, আমার নানার বাড়ি ঝিনাইগাতিতে। এখানে বেড়াতে এসে জানতে পারি মায়াবী লেকের কথা। তাই কয়েকজন মিলে ঘুরতে এসেছি। তিনি আরও বলেন, এত সুন্দর একটা জায়গা শেরপুরে আছে, আমরা কেউ জানতাম না। মনে হচ্ছে এখানে বাড়িঘর তৈরি করে থেকে যাই।
মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে মুনতাহা। পাহাড়ে চড়ার এক ফাঁকে সে বলে, আমি শেরপুরের নকলা উপজেলার একটি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। মায়াবী লেক এত সুন্দর যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। যে কেউ ইচ্ছা করলে এক দিনের জন্য সময় বের করে ঘুরে যেতে পারেন মায়াবী লেক থেকে।
শাহরিয়ার শান্ত একটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঘুরতে এসেছেন মায়াবী লেকে। তিনি বলেন, এখানে আসব বলে লাখ টাকা খরচ করে ড্রোন কিনেছি। কারণদত সুন্দর ভিডিও ড্রোনের মাধ্যেমে মোবাইলে ধারন করে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের দেখাব। মায়াবী লেকের ওপরের ভিউ দেখলে যে কেউ মনে করবে এটি কাশ্মীর বা সুইজারল্যান্ড।
জসিম মিয়া বলেন, তীব্র গরমে কেউ যেন তৃষ্ণায় কষ্ট না পায়, সে জন্য ঠান্ড পানীয় বিক্রি করছি। মায়াবী লেকে আজই প্রথমবারের মতো দোকান বসালাম। মোটামুটি ভালোই বেচাবিক্রি হয়েছে।
আরিফুল জানান, মায়াবী লেক একদমই নতুন স্পট। তবে এখানে কোনো হোটেল বা খাবারের দোকান নেই। এখানে বিভিন্ন জেলার দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী আসছেন। তাই তাদের দুপুরের খাবারের জন্য রান্না করা খাবার বিক্রি করছি। এখানে মুরগির গোশত, পোলাও, ডিম ও গরুর গোশত অল্প দামে পাওয়া যাচ্ছে।
শেরপুরের জেলা প্রসাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, মায়াবী লেক সত্যিই অপরূপ সুন্দর একটি জায়গা। মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য এখানে আসে। তবে বনায়ন, জীববৈচিত্র্য, হাতির অভয়ারণ্য— এসব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে জায়গাটি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।