শান্তি প্রতিষ্ঠায় তথ্যের সততা নিশ্চিতে অঙ্গীকারের আহ্বান তথ্য প্রতিমন্ত্রীর
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে তথ্যের সততা নিশ্চিতে অঙ্গীকার করতে আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) কনভেনশন হলে পিস অ্যাম্বাসেডরস জাতীয় সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভিন্ন মত থাকা সমাজ ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু যেখানে একমত হতে হবে সেটি হচ্ছে, সত্য ও সঠিক তথ্য বলতে হবে। সত্য আগে স্বীকার করতে হবে। তার পর ভিন্ন মতামত দিতে হবে। তথ্যই যদি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং এর মাধ্যমে যদি একটা চিন্তা তৈরি করা হয়- এটা ভালো, ওটা খারাপ তাহলে সেটা সমাজে কারও মঙ্গল বয়ে আনবে না। কাজেই আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে, আমরা তথ্যের জায়গায় সততা নিশ্চিত করবো।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, তথ্য যাচাই-বাছাই করা আমাদের দায়িত্ব। সত্য মেনে নেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে, রাজনীতির সাথে মিলিয়ে তথ্য বিকৃত করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। আগে অঙ্গীকার করতে হবে, আমি যে রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করি না কেন, তথ্যের জায়গায় আমি নিশ্চিত করতে চাই আমার সততা। সেই তথ্য, যেটা সত্য। সত্য কারও পক্ষে যাবে, কারও বিপক্ষে। সত্য যেদিকেই যাবে সেটা মেনে নিতে হবে। কিন্তু এই সমাজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনেক জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যাচার হয়। শুধু আমার রাজনৈতিক চিন্তার পক্ষে গেছে বা যে লোকটিকে আমি রাজনৈতিকভাবে অপছন্দ করি তার বিপক্ষে গেছে এজন্য যতই মিথ্যা হোক সেটা আমি আরও দশ জনকে প্রচার করি। এটি ন্যায়সঙ্গত নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এমন কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে গেছে ও ঘটানো হয়েছে, যে কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ দাঁড়িয়ে আছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ওপরে। বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের রক্তের ইতিহাস আছে। তার ওপর দিয়ে বিভক্তি ও দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হওয়ার অনেক কারণ আছে। তবে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দল-মত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে পেছনে নিয়ে যাবে।
রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা প্রয়োজন, ভিন্ন মত থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা হবে ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরিণত হয় যখন নেতিবাচকতা চলে আসে। নিজের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে, নিজের শ্রম, মেধা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন প্রতিটি ব্যক্তি পর্যায়ে, দলগত এবং গোষ্ঠী পর্যায়ে। যদি আমরা ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারি তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
আরাফাত আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশের জন্ম এবং আজ এ দেশের এগিয়ে যাওয়া। সেই মূল জায়গায় কোনো আপোষ চলবে না। বাংলাদেশের জন্ম যেখানে, যে চেতনা ধরে, সেখানে কোনো আপোষ চলবে না। তার বাইরে আমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের গোড়ায় গিয়ে সকল দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যে অপশক্তি, মৌলবাদী যে অপশক্তি, সেই ধরণের উগ্রবাদী কোনো অপশক্তিকে আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে কোনো জায়গা দিতে চাই না। কারণ তারা গণতন্ত্রকে, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে এবং শান্তিকে বিনষ্ট করে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপশক্তিগুলোকে বাদ দিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশে উদ্যোগে, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) সহযোগিতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমসের অংশীদারিত্বে সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রানা মো. সোহেল, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ।