ময়মনসিংহে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ময়মনসিংহে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ২০২৪ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সোমবার (২৫ মার্চ) ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি মো: শাহ আবিদ হোসেন, পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মদ ভূঁঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরিফুল হক মৃদুল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকার।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি বলেন, ১৯৭১ সালে কি হয়েছিল এর প্রকৃত ইতিহাস এখনো পুরোপুরি লেখা হয়নি। ১৯৭৫ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের সঠিক কথা বলা হতো না। জয় বাংলা স্লোগান বাদ দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শিখানো হয়েছে। যে শ্লোগানের মাধ্যমে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল, যে শ্লোগানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, যে শ্লোগানের জন্য ৩০ লক্ষ শহিদ হয়েছে সে শ্লোগানকে বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা এ কথাগুলো বলতে পারছি। যারা এই স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কিন্তু ইতিহাসের গহোভরে হারিয়ে গিয়েছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে তোমাদেরকে আগামীর নেতৃত্ব দিতে হবে। আর নেতৃত্ব দিতে হলে ইতিহাস জানতে হবে, পড়তে হবে ও বুঝতে হবে। দেশ সম্পর্কে জানতে হবে, জাতি হিসেবে জানতে হবে। তোমরা একটি লক্ষ্য নিয়ে বড় হও কিন্তু উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার থাকা দরকার।
বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, তোমাদের দেশপ্রেম থাকতে হবে। তুমি নিজের জন্য যেমন ভাল কাজ করবে তেমনি দেশের ভালোর জন্য কাজ করতে হবে। একজন স্বাভাবিক মানুষ হতে হবে, তুমি যা কিছুই করনা কেন, তোমার বুকের মধ্যে দেশপ্রেমকে রাখতে হবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না, একজন বাঙালি হও, একজন নীতিবান মানুষ হও।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি বলেন, গণহত্যা দিবস আমরা কেন পালন করছি? ভবিষ্যত প্রজন্মকে এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার জন্যই এই আলোচনা সভা। ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ওই দিন থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই অপারেশনে নির্বিচার মানুষ হত্যা করে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে কিভাবে স্বীকৃতি পেতে পারে সে বিষয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যদি স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই ইতিহাস জানতে হবে।
আলোচনাসভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক মন্ডলী, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে গীতিনাট্য/সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মিনিপলে গণহত্যার উপর আলোকচিত্র/ প্রামাণ্যচিত্র/ ভয়াবহতার চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা সহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে ২৫ মার্চের কাল রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। রাত ১১.০০টা থেকে ১১.০১টা মিনিট পর্যন্ত সারা দেশের ন্যায় ময়মনসিংহেও একমিনিট (বিদ্যুৎ বিহীন) প্রতীকী ব্লাক আউট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।