ময়মনসিংহে সৌরভ হত্যাকান্ডে চাচাসহ গ্রেফতার ৩
ময়মনসিংহে চাঞ্চল্যকর সৌরভ হত্যাকান্ডে জড়িত তার চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক এই ঘটনার কথা স্বীকার করে হত্যাকান্ডে জড়িতরা সবাই। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ ও চালক আব্দুল হান্নান আকন্দকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মদ ভুইঞা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভকে বাসায় ডেকে নিয়ে চাচা ও তাঁর শ্যালক ধাঁরালো ছুঁরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর মরদেহ বাথরুমে রেখে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে চার টুকরো করে কালো রঙের লাগেজে ভরা হয়। এরপর রাতের আঁধারে একটি প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মনতলা ব্রীজের নীচে সুতিয়া নদীর কচুরিপানাতে মরদেহভর্তি লাগেজটি ফেলে দেয়। হত্যাকান্ডের একদিন পরই কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার মূল হোতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে পুলিশ সুপার জানান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ তারাটি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আলীর পুত্র সৌরভের সাথে তারই চাচাতো বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকে। দুই পরিবারই এ সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তাদের মধ্যে মান-অভিমান চলছিলো। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিন বছর আগে ইউসুফ আলীর ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইলিয়াস আলীর স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ইভা আক্তারের সাথে কানাডা প্রবাসী আব্রাহাম এর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করে। কিন্তু সৌরভ ইভার অন্যত্র বিয়ের বিষয়টি মানতে পারেনি।
পরিবারকে না জানিয়ে গত ১২ মে ইভা ও সৌরভ গোপনে বন্ধুদের নিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এখবর জানাজানি হলে ইভার পরিবার মেনে নেয়নি। যার ফলশ্রুতিতে ইলিয়াছ তার মেয়ে ইভাকে গত ১৬ মে পূর্বের স্বামীর কাছে কানাডা পাঠিয়ে দেয়। এনিয়ে ক্ষুব্ধ সৌরভ ১ জুন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ইভার পূর্বের শ্বশুড়বাড়ীতে এসে তাদের প্রেম-ভালোবাসার বিষয়টি বিস্তারিত বলে চলে যায়।
বিষয়টি ইলিয়াস জানতে পেরে তার পুত্র মৃদুলকে দিয়ে মোবাইল ফোনে সৌরভকে ময়মনসিংহ নগরীর গোহাইলকান্দি ভাড়া বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে ইলিয়াছ তার শ্যালক ফারুককেও ডেকে আনে। এরপর দুজনে মিলে সৌরভের হাত-পা বেঁধে মাথায় ধাঁরালো ছুরি দিয়ে আঘাতে হত্যা করে। পরে মরদেহ বাথরুমে রেখে নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার একটি দোকান থেকে কালো রঙের একটি লাগেজ কিনে আনে এবং বাথরুমে রাখা মরদেহটি থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মাথা ও পা দুটি আলাদা করে মোট চার টুকরো মরদেহ সেই লাগেজে ভরে।
খুনের মোটিভ বা খুনীরা যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য হত্যাকারি ইলিয়াস ও ফারুক গ্লোভস ব্যবহার করে এবং আঙ্গলের ছাপ কেটে নষ্ট করে ফেলে। পরে সেদিন রাতেই একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় এনে মরদেহ ভর্তি লাগেজটি তুলে নগরীর আকুয়া বাইপাসসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অবশেষে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মনতলা ব্রীজের নীচে সুতিয়া নদীর কচুরিপানাতে মরদেহভর্তি লাগেজটি ফেলে আসে।
পুলিশ সুপার জানান, মরদেহটি উদ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরিচয় সনাক্তের জন্য তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর সৌরভের বোন ও মামা খন্ড-বিখন্ড মরদেহটি নিশ্চিত করে। পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে নতুন ওই লাগেজের উৎস খুঁজে বের করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যাকারি নিশ্চিত করে ঢাকার একটি কলেজ হোস্টেল থেকে শ্যালক ফারুককে গ্রেফতার করে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে সৌরভের চাচা ইলিয়াসকে গ্রেফতার করে। তাদের কথামতো পুলিশ প্রাইভেটকার চালক আব্দুল হান্নান আকন্দকে গ্রেফতার করে এবং গাড়ীটি জব্দ করে।