ভারতকে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে হবে : দ্য হিন্দুকে ড. ইউনূস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ, বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দ্য হিন্দুর অনলাইন সংস্করণে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলে ড. ইউনূস।
হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও চরমপন্থার উত্থান নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনকে ‘প্রচারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ড. ইউনূস। বিষয়টি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনার কারণ হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। তার উপস্থিতি (ভারত–বাংলাদেশ) সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে…দ্য হিন্দু সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দারের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এ সময় ভারতে অবস্থান কোনও সমস্যা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে তার কথা বলাটা সমস্যা। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। আর সেগুলো রাজনীতি নিয়ে। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, এটাই সমস্যা।’
হিন্দু সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘সেটা কীভাবে?’
উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) মানুষকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বলছেন। ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে বলছেন। তার অডিও ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে তিনি মানুষজনকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি (ঢাল হিসেবে) সঙ্গে রাখতে বলছেন। যেন পুলিশ বাধা দিলে তারা বলতে পারেন, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এটি অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ।’
‘তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আপনার সরকার ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে… ভারতের কাছে সরাসরি এ অনুরোধ করা হলো না কেন? এ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থা রয়েছে।’ সুহাসিনীর এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘তাকে ফিরিয়ে আনতে আমরা সব আইনি পথ অবলম্বন করব।’
হিন্দু সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘প্রকৃতপক্ষে এখনও আপনার সরকার তার প্রত্যার্পণের অনুরোধ জানায়নি। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে।’ জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা সেই পথে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি, তবে আমরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি।’
প্রশ্ন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচার করা হচ্ছে-এমন যুক্তি দেখিয়ে ভারত যদি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে কী হবে?’ জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনি কি বলছেন, ভারত চুক্তি লঙ্ঘন করবে? হ্যাঁ, চুক্তিতে এমন কিছু ধারা রয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার যদি তাকে (শেখ হাসিনা) সেখানে রাখতে এগুলো প্রয়োগ করে, তাহলে সেটা আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ খুবই স্বল্পস্থায়ী। তাই এই সময়ে হয়তো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সবকিছু মীমাংসা করা যাবে না। তবে আমাদের পরে যে সরকারই আসুক না কেন, তারা এটা ক্ষমা করবে না।’
‘সাংবাদিকের প্রশ্ন, আপনি কি মনে করেন, অন্য বিষয়গুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক মসৃণভাবে এগোবে? সম্প্রতি আমরা জ্বালানি ও বাণিজ্য সংযোগে কিছু উদ্যোগ দেখেছি।’ জবাবে, ড ইউনূস বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন হলো এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করা, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো। (ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ ও বাণিজ্যের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে)। আপনি যা উল্লেখ করেছেন, তা ভালো ইঙ্গিত এবং আমরা সেই দিকেই এগোতে চাই। তবে এটি এখনও আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে বহু দূরে। আমরা খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের একটি ঐক্য চাই। যমজের মতো একসঙ্গে থাকার জন্যই আমরা জন্মেছি।’