বিশ্বব্যাপী করোনায় প্রাণহানি কমলেও বেড়েছে সংক্রমণ
চলমান মহামারি করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। যদিও আগের দিনের তুলনায় বাড়ল প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে শনাক্ত নতুন রোগীর সংখ্যা। গেল ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনার ভয়াল থাবায় মৃত্যুবরণ করেছেন সাড়ে সাত হাজারের বেশি লোক। একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যাও প্রায় পাঁচ লাখে পৌঁছে গেছে।
সর্বশেষ এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখল যুক্তরাষ্ট্র। অপর দিকে দৈনিক মৃত্যুতে বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। আর রাশিয়ার অবস্থান এখন দ্বিতীয়। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় সংক্রমিতদের সংখ্যা ২১ কোটি ৩২ লাখের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। অন্য দিকে প্রাণ হারানোদের সংখ্যাও এরই মধ্যে ৪৪ লাখ ৫২ হাজারে পৌঁছে গেছে।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডো মিটারস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সাত হাজার ৫৩১ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় প্রাণহানি কমেছে প্রায় ৭ শতাধিক। এতে বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রাণ হারানোদের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭৮ জনে পৌঁছেছে।
এছাড়া নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন চার লাখ ৯৫ হাজার ৮৯৮ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে প্রায় ৪৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এতে মহামারির শুরু থেকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২১ কোটি ৩২ লাখ ৩১ হাজার ৬৮১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ দিকে এক দিন পরই বিশ্বে দৈনিক সংক্রমণের শীর্ষে উঠে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনা ভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন ৯৬ হাজার ১২২ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০১ জন। করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৮৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া প্রাণ হারিয়েছেন ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৭ জন করোনা রোগী।
অপর দিকে শেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটল দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায়। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৪২ জন। আর নতুন করে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবায় শনাক্ত হয়েছেন নয় হাজার ৬০৪ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬০ জনে পৌঁছে গেছে। আর করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২১৪ জন রোগীর।
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনার থাবায় মারা গেছেন ৩৭০ জন। আর নতুন করে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ১৩ হাজার ১০৩ জন। অন্য দিকে মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটি পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৪ জন ছাড়িয়েছে। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৪ জন করোনা রোগীর।
করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারত। যদিও ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানোদের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান এখন তৃতীয়। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬৬ জন এবং নতুন করে ভাইরাসটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৩৫৯ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে তিন কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৩২৮ জন। আর মারা গেছেন চার লাখ ৩৫ হাজার ৫০ জন।
এ দিকে গেল ২৪ ঘণ্টায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৬৫৭ জন। এছাড়া প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬১০ জন। মহামারি করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৭১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বিপরীতে এক লাখ দুই হাজার ৬৪৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৭ জন ফ্রান্সে, ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪১ জন রাশিয়ায়, ইউরোপের দেশ ইতালিতে ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭৯ জন, যুক্তরাজ্যে ৬৫ লাখ ২৪ হাজার ৫৮১ জন, মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কে ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২০ জন, জার্মানিতে ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৭৯ জন, স্পেনে ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫২ জন এবং ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৩ জন মেক্সিকোতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
অপর দিকে করোনায় সংক্রমিত হয়ে এখন পর্যন্ত এক লাখ ১৩ হাজার ৪১৯ জন ফ্রান্সে, আর এক লাখ ৭৬ হাজার ৮২০ জন রাশিয়ায়, এছাড়া এক লাখ ৩১ হাজার ৬৮০ জন যুক্তরাজ্যে, ইউরোপের দেশ ইতালিতে এক লাখ ২৮ হাজার ৭৯৫ জন, মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কে ৫৪ হাজার ৭৬৫ জন, জার্মানিতে ৯২ হাজার ৪৯৭ জন, স্পেনে ৮৩ হাজার ৩৩৭ জন এবং দুই লাখ ৫৩ হাজার ১৫৫ জন মেক্সিকোতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ প্রাণঘাতী ভাইরাসে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে।