বসল শেষ স্লাব, পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল পদ্মাসেতুর সড়কপথ
স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্প নতুন এক মাইলফলক পূরণ করলো আজ (সোমবার, ২৩ আগস্ট)। এদিন সেতুতে শেষ স্ল্যাব বসানো হয়েছে। ফলে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে সড়কপথ।
সেতুটিতে মোট দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের সবগুলোই বসানো শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করার ক্ষেত্রে বাকি থাকল শুধু পিচঢালাই।
আজ (সোমবার, ২৩ আগস্ট) সকালে সেতুর শেষ স্লাব বসানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের।
তিনি বলেন, সেতুর মোট দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে মাত্র তিনটি স্লাব বসানো বাকি ছিল। যার মধ্যে গতরাতে বসানো হয় দুটি স্লাব। আর আজ সকালে একটি। এর মধ্য দিয়ে পদ্মাসেতুর কাজ আরো একধাপ এগিয়ে গেল। এ ছাড়া পদ্মাসেতুর মাঝখান দিয়ে গ্যাসলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে শেষ হতে চলছে রেললাইনের কাজও। আগামী বছরের জুনের আগেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা হবে। এ জন্য এ প্রকল্পে কর্মরত সবাই একযোগে দিনরাত কাজ করছেন।
এরইমধ্যে পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকায় এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, ২০২২ সালের জুন মাসের যেকোনো দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। সে লক্ষ্যে সেতু প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা কাজ করে চলছেন। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
সেতুর মোট ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে সর্বশেষটি আজ সকালে বসানো সম্পন্ন হয়। এর আগে চলতি বছরের ২০ জুন শেষ হয়েছিল দ্বিতল সেতুর রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ।
সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মূল সেতুর কাজের আর বাকি মাত্র ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এর আগে গতকাল পদ্মাসেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমে বলেন, শেষ তিনটি রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজ বাকি আছে। সেতুর ১২ ও ১৩নং পিলারের স্প্যানে শেষ তিনটি রোডওয়ে স্লাব বসানো হচ্ছে। রাতের মধ্যে দুটি স্লাব বসানো হয়ে যাবে। সর্বশেষ একটি রোডওয়ে স্লাব সোমবার সকালে বসানো হবে। সকাল ৯টা থেকে ১০টির মধ্যে শেষ রোডওয়ে স্লাবটি বসানোর প্রস্তুতি রয়েছে। ফলে সকালেই রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজ শেষ হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পিচঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে আগামী অক্টোবর মাসের শেষ দিকে। এ কাজে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতু বিভাগকে জানিয়েছে, তারা আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই সব কাজ শেষ করবে।
সব মিলিয়ে আগামী মে মাসেই পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব। তবে সেতু বিভাগ জানিয়েছে, দিনক্ষণ ঠিক করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর।
এর আগে চলতি বছরের ২০ জুন শেষ হয়েছিল দ্বিতল সেতুর রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ।
২০০১ সালে মাওয়া পুরান ফেরিঘাটে মাছ বাজার সংলগ্ন এলাকায় এই সেতুর ফলক উন্মোচন করেন সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সরকার বদল হলে, থেমে যায় কাজ। আবার ২০০৯ সালে তোড়জোড় শুরু হয় কাজের। অনেক চড়াই উতরাই পার করে অবশেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু।
এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছিল। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ। আজ রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজ শেষের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে পদ্মাসেতু চোখের সামনে শুভ উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই পদ্মাসেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে।