শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
আলোচিত সংবাদব্রেকিং নিউজময়মনসিংহ

প্রশ্নফাঁসে গ্রেফতার : বাবা ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, ঢাকায় বিলাসী জীবন দুই ভাইয়ের

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে দুজন আপন ভাই সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সাইম হোসেন (২০)। তারা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ইচাইল গ্রামের মো. সাহেদ আলীর ছেলে। তারা দুই ভাই পেশায় ফিল্টার পানির ব্যবসায়ী।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি সাখাওয়াত। মাদরাসায় কয়েক মাস লেখাপড়া করে ১২ বছর আগে নিজ গ্রামে পানির ফিল্টারের ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছরেও ব্যবসায় সফলতা আসেনি। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালাতেন। এরপর ছোট ভাই সাইমকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান।

তাদের বাবা সাহেদ আলী ৪০ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করেন। সাহেদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।

এলাকার লোকজনের ভাষ্য, সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনের বাবা সাহেদ আলী অন্তত ৪০ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। ময়মনসিংহ নগরীর লাশকাটা ঘর এলাকায় ও পরে সেখান থেকে তিন বছর আগে দিঘারকান্দা বাইপাস এলাকার কাদুরবাড়ি মোড়ে ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবসা করে আসছেন তিনি। আকুয়া বাইপাস এলাকায় ভাগনি কমলা খাতুনের বাসায় বসবাস করেন সাহেদ আলী।

সাখাওয়াত ভাই বোনদের মধ্যে বড়। হাফেজিয়া মাদরাসায় তিনি লেখাপড়া করেছেন। ঢাকার মতিঝিলে পানির ফিল্টারের ব্যবসা আছে। তবে তিনি বিলাসী জীবনযাপন করেন। এশিয়া মহাদেশসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন বলে জানান সাখাওয়াতের কাছের বন্ধুরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটবাড়ি কিনেছেন তিনি। ময়মনসিংহ নগরীর বাইপাসেও রয়েছে তার জমি। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছেন, আছে ড্রাইভারও। ঢাকায় ফিল্টারের ব্যবসা করে গাড়ি কিনে এলাকায় আলোচনায় আসেন সাখাওয়াত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক কাছের বন্ধু বলেন, এক সময় সাখাওয়াতের পরিবার কষ্ট করে জীবনযাপন করেছে। হঠাৎ আর্থিক অবস্থার এত পরিবর্তন কীভাবে হলো এ নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তিনি ঘন ঘন বিদেশ যেতেন। এশিয়া মহাদেশের প্রতিটি দেশ তার ভ্রমণ করা শেষ। তিনি আমেরিকাসহ কানাডা ভ্রমণ করেছেন। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছেন। ড্রাইভারও রেখেছেন। তবে বাড়িতে কোনো সম্পত্তি কেনেননি।

সাখাওয়াতের ফুপাতো বোন আছিয়া বেগম বলেন, সাখাওয়াত ও সাইমের মা কিশোয়ারা বেগম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১২ বছর আগে মারা যান। দুই ভাই ও দুই বোন তারা। তাদের বোন ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট বোন ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়ছেন।

সাখাওয়াতের চাচি জমিলা খাতুন বলেন, সাখাওয়াত মতিঝিলে পানির ব্যবসা করে সংসার চালায়। বাড়িতে কোনো সম্পত্তি নেই। পানির ব্যবসা করেই ভাইবোনদের মানুষ করেছে। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছে। এবার ঈদে বাড়িতে আসে নাই।

বাবা সাহেদ আলী বলেন, আমি ৪০ বছর যাবত ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করি। ছেলেরা আমার ১৭ কাঠা জমি বিক্রির টাকায় ঢাকায় পানির ফিল্টারের ব্যবসা করে আসছে। আনুমানিক দুই বছর আগে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১১ লাখ টাকায় প্রাইভেটকার কিনেছে সাখাওয়াত। ব্যবসার ওপর ছেলেদের কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৫ বছর আগেও তার বাবা আমার বাড়িতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেছে। ১০ বছর আগে তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন ছিল না। হঠাৎ করে গাড়ি কেনা, দেশ বিদেশে ভ্রমণ করা অস্বাভাবিক মনে হয়। তাদের আচার আচরণে বোঝা যায় তারা অনেক টাকার মালিক।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে থাকার জন্য ৫-৬ কাঠা জমি হবে। কী পরিমাণ জমি বিক্রি করে তার ছেলেকে দিয়েছে তার সঠিক হিসাব আমি বলতে পারবো না। তবে ১৭ কাঠা জমি বিক্রি করেনি।

৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাদল বলেন, ইছাইল গ্রামের সাহেদ আলী ও তার দুই ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনকে চিনতাম না। তবে ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল না। যদি তারা কোনো অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে সরকার যেন তাদের শাস্তির আওতায় আনে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *