পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন ও সদর উপজেলায় শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলার আট ইউনিয়নের অন্তত ৬৮টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিম্নাঞ্চলের গ্রামের রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। অতিরিক্ত ঢেউয়ে হুমকিতে রয়েছে নেত্রকোনা-কলমাকান্দা সড়কের একাংশ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ৪ দশমিক ৭৯ মিটার নিচে আছে। ওই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে পানি। কংস নদের পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধুন নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। আরেকটু পানি বাড়লে মানুষজনকে বাড়িঘর ছাড়তে হবে।’
ওই উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বড়খাপন ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর এক থেকে আধাফুট পানি বাড়লে অনেককেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে।’
বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
কৈলাটি ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, বেনুয়া, খলা, চারালকোনা, সনুড়া, সাকুয়া ইন্দ্রপুরসহ ১৫টি গ্রামে নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিচু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
খারনৈ ইউপির চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ইউনিয়নটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তবে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলের চাপে রাজনগর, বালুচড়া, বাউসাম, চৌতানগর, তাড়ানগর, ঘোড়াগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে।’
জেলা পাউবো কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমেছে। কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়া ঝাঞ্জাইল রেলস্টেশন এলাকায় ১০৪ মিলিমিটার হয়। একই সময়ে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলায় ৫০টির মতো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বারহাট্টার ইউএনও ফারজানা আক্তার বলেন, তার উপজেলার রায়পুর, চিরাম ও সাহতা ইউনিয়নের অন্তত ৯টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে এটাকে বন্যা বলা যাবে না।
বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।