পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর স্প্যানে ফেরি ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’-এর ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
খালিদ মাহমুদ বলেন, সেতু বিভাগের লোকজন জানিয়েছেন- তারা স্প্যানে ধাক্কার কোনো চিহ্ন পাননি। কিন্তু আমরা ভিডিওতে দেখলাম ফেরি ধাক্কা দিচ্ছে। এ বিষয়ে গভীর তদন্ত করতে হবে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুর ২ ও ৩ নম্বর পিলারের মাঝখানে ‘ওয়ান বি’ স্প্যানের সঙ্গে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির মাস্তুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমরা ব্যক্তিগত উপলব্ধি- আজকের ঘটনায় মধ্যে আমি গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি। এটার পেছনে কোনো…আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আমি বলেছি, সিনিয়র মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আজকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে এবং এটা অবশ্যই উদঘাটন করতে হবে।
‘কারণ এত সকাল বেলা এই ঘটনা আমরা দেখলাম, জাহাজ গেল, আবার ওখানে গিয়ে কোনো চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভিডিওতে দেখছি (মাস্তুল) বাড়ি খেয়ে পড়ে গেল। বলা হচ্ছে ওটা লোহার, লোহার হলে তো পড়ে যাবে না বেঁকে যাবে এবং ঘষা খাবে। কিন্তু ঘষার কোনো চিহ্ন নেই। এই সংবাদগুলো কেন আসছে, এটাও একটা তদন্ত হওয়া দরকার। আমার কথা ভুল হলে আমি খুশি হবো যে এটার মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র নেই।’
এবার পদ্মা সেতুর স্প্যানে ধাক্কা লেগেছে, পদ্মা সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী স্প্যানে কোনো নৌযানের ধাক্কা লাগার কথা নয়- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা তো আমাদেরও প্রশ্ন। পদ্মা সেতুর যে নকশা করা হয়েছে, সেই নকশা অনুযায়ী যে উচ্চতা থাকার কথা, সেখানে কোনোভাবেই উপরের স্প্যানে আঘাত লাগার কথা নয়। আজকে এটা হয়েছে, কেন হয়েছে? আমরা বলেছি, এটার নিবিড় তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত…এই ঘটনার পেছনে অন্য কিছু উদ্দেশ্য আছে কি-না সেটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।
তিনি বলেন, আমরা এত সতর্ক, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য সেখানে ১৩ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এজন্য মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের অপরাধী ভাবছি। এখন তো মনে হচ্ছে এটা পদ্মা সেতুর আঘাত না, আঘাত আমাদেরকেই করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চাই এটার সঠিক তদন্ত হোক। অপরাধী যেই হোক, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেগুলো তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক।
‘যদিও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে স্প্যানের মধ্যে তারা কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাননি। আমরা ভিডিওতে দেখলাম সেখানে ধাক্কা লেগেছে। তারা স্থান পরিদর্শন করে দেখেছেন, কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এগুলো তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।’
এর আগের পদ্মা সেতুতে আঘাতের ঘটনায় তদন্তে কী বের হয়েছিল- জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, মাস্টার-সুকানিসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মেডিকেল পরীক্ষাও করা হয়েছে। স্বাস্থ্যগত কোনো ধরনের ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে যে ধরনের (নাশকতা) কথা বলছি, সেই ধরনের কোনো বিষয়ও উদঘাটন করা যায়নি। তাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য পাওয়া যায়নি। সেগুলো দুর্ঘটনাই ছিল। আমি বলেছিলাম, উদাসীনতা ও দুর্বলতা আছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
পদ্মার পানির সমতল থেকে সেতু পর্যন্ত ১৮ মিটার উচ্চতা রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দশমিক ৫ মিটার অতিরিক্ত উচ্চতা রেখেছিল।
‘পদ্মা সেতু যেভাবে তৈরি করা হয়েছে এই ধরনের ধাক্কা দিয়ে পদ্মা সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে আমাদের মনের। আজকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিশ্বাসঘাতকতার জায়গায় চলে গেছে। এটা কেন বলতেছে, এটা তাদের অনুভূতির জায়গায় চলে গেছে। এটাই হচ্ছে আমাদের বড় কষ্ট।’
ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মাঝিরকান্দি ঘাট বিকল্প হতে পারে। এসব ঘটনার পর আমাদের মাস্টারদের মধ্যেও ভীতি তৈরি হয়েছে। আবার যদি কোনো ঘটনা ঘটে যায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সেজন্য আমরা মাঝিরকান্দি ঘাট প্রস্তুত রেখেছি। সেখানে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্যতা ও রাস্তার বিষয়টি ক্লিয়ার হলে হয়তো আমরা হালকা যানবাহন আপাতত পারাপার করতে পারব। কারণ এখানে ইয়ার্ড করার কোনো সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ একটা জায়গা দেবে ইয়ার্ড করার জন্য।
অনেক ফেরির ফিটনেস নেই বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ১২ বছরে আমরা ২৩টি ফেরি যুক্ত করেছি। আমাদের আরও ফেরি প্রয়োজন। মানুষের চাহিদার জন্য আমাদের ঝুঁকি নিয়ে এগুলো চালাতে হয়। কিন্তু ফেরিগুলো রেগুলার মেইনটেনেন্স করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গতকাল ডাকইয়ার্ড থেকে পানিতে নেমেছে।