নোয়াখালীতে বন্যায় মৃত্যু ১১, পানিবন্দি ১৮ লাখ মানুষ
নোয়াখালী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। ১০৬৩ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ এবং এই জেলায় নিহত হয়েছে ১১ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলার মধ্যে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও কবিরহাট উপজেলার অধিকাংশ সড়কের কোথাও হাঁটুসমান বা কোথাও হাঁটুর নিচে। বেশির ভাগ বসতঘরে এখনো পানি। খুব ধীরে ধীরে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে, যা মানুষের জন্য আরও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় পানিবন্দি আছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ জন মানুষ। ১০৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ১৮৮ জন মানুষ। জেলায় বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। সরকারিভাবে ১২৪ ও বেসরকারিভাবে ১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ টাকা, ১৭১৮ মেট্রিক টন, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন।
ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে বন্যার্তদের সহায়তা করতে আসা আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর সজিব তারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের লোকজন বন্যার সঙ্গে তেমন একটা পরিচিত নন। কিন্তু এখানকার বেশির ভাগ খাল ও পানি নিষ্কাশনের পথগুলো ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে এবারের অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে ধেয়ে আসা পানির চাপ নিতে পারেনি। এ কারণে এখানে প্রথমত জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে তা ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, গেল তিন দিন জেলায় কোনো বৃষ্টি না হলেও বন্যা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে বন্যা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। অন্যদিকে বন্যার ক্ষতির পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। তারমধ্যে নোয়াখালী সদরে দুইজন, সেনবাগে চারজন, বেগমগঞ্জে দুইজন, সুবর্ণচরে দুইজন ও কবিরহাটে একজন। জেলার আট উপজেলায় পানিবন্দি আছেন ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ জন মানুষ। ১০৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ২ লাখ ১ হাজার ১৮৮ জন মানুষ।
চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। তবে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। ছাত্র জনতাকে সঙ্গে নিয়ে একাধিক খাল পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করেছি। তবে পানি নামছে ধীরগতিতে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা শহরের পানি কমছে। আমরা ইতোমধ্যে গাবুয়া খালসহ একাধিক খাল পরিষ্কার করেছি। ছাত্র-জনতা অবৈধ বাঁধ কেটে দিয়ে পানির চলাচল স্বাভাবিক করছে। আশাকরি বৃষ্টি না হলে পানি খুব দ্রুতই নেমে যাবে।