বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আলোচিত সংবাদনেত্রকোনাব্রেকিং নিউজময়মনসিংহ

নেত্রকোনায় বন্যায় ভেসে গেছে দেড় হাজার পুকুরের মাছ

ভয়াবহ বন্যায় নেত্রকোনার পাঁচ উপজেলায় অন্তত দেড় হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় আট কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩২০ টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

নেত্রকোনা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলাটিতে মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ৮৪ হাজার ১৬৫ হেক্টর। এতে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় এক লাখ ১০ টন। এরমধ্যে ছোট–বড় ৮৯টি হাওরে ৪০ শতাংশ, খাল-বিল ও নদ-নদীতে ১৫ শতাংশ মাছ উৎপাদিত হয়। বাকি ৪৫ শতাংশ মাছ পুকুরে চাষ করা হয়। জেলায় পুকুরের সংখ্যা ৬০ হাজার ১০২টি। আর মাছচাষির সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৩৮ জন।

জেলায় মোট উৎপাদিত মাছের অর্ধেক দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে গত সপ্তাহে নেত্রকোনার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দেয়।

সূত্রগুলো বলছে, বন্যাদুর্গত এলাকায় মৎস্য সম্পদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৩১২ দশমিক ৫৯ হেক্টর জমিতে অন্তত এক হাজার ৪৮০টি পুকুর ও খামারের ৭২৩ দশমিক ৪৩ টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ কারণে ৮৯৬ জন মাছ চাষির প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি হিসেবে শুধু মাছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩২০ টাকা। এছাড়া ভৌত অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে আরও এক কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে চাষিদের দাবি, মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও সদর উপজেলায়। সদরের ৯৬৩টি ও কলমাকান্দায় ৩২২টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেকে।

বারহাট্টা উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, হঠাৎ পানি চলে আসায় পুকুরে জাল দিয়ে বেড়া পর্যন্ত দেওয়া যায়নি। সব মাছ চোখের সামনে চলে গেছে। শত শত মাছ চাষির সব মাছ চলে গেছে।

কলমাকান্দা উপজেলার আমতৈল গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করি। বন্যার আশঙ্কায় পুকুরের পাড়ে জাল দিয়ে বেড়া (ঘের) দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ঢলের তোড়ে জালের বেড়া তো টেকেনি, পাড়ও ধসে গেছে। চোখের সামনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

এবিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, আকস্মিক বন্যায় মৎস্য সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তথ্য নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যায় শুধু পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়া নয়, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি আছেন। ত্রাণ সহায়তাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে সম্মিলিত সহযোগিতায় এ সংকট সহজে কেটে যাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *