ধর্ষণের অভিযোগে ময়মনসিংহে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি গ্রেফতার
ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টানা ৫ মাস কিশোরীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ময়মনসিংহে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি হোসেন আলী গ্রেফতার হয়েছে। তার স্ত্রী তামান্না বেগমের সহায়তায় এই ঘৃণ্য অপরাধ করে হোসেন আলী। এ ঘটনায় হোসেন আলী ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমকে আসামী করে কোতায়ালী মডেল থানায় মামলা নং ৮২(০৯)২১ দায়ের হয়েছে। এর আগে র্যাব ময়মনসিংহ তাকে আটক করে।
মামলার মতে, জনৈক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর আদর্শ কলোনীতে ভাড়ায় বসবাস করছিলেন। পাশের বাসায় ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি হোসন আলী তার ৩য় স্ত্রী তামান্না বেগমকে নিয়ে বসবাস করছিলো। পাশাপাশি বাসা হওয়ার সুবাধে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীর কিশোরী মেয়ে সহ অন্যান্যরা একে অপরের বাসায় আসা যাওয়া করতো।
এ সুযোগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী সকালে হোসেন আলী তার স্ত্রী তামান্নাকে দিয়ে ঐ কিশোরীকে তার বাসায় ডেকে নেয়। সুচতুর হোসেন আলী আগে থেকে কোমল পানীয়ের (সেভেন আপ)সাথে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে রাখে এবং ঐ কোমল পানীয় কিশোরীকে খাওয়ায়। এতে কিশোরী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করে। পাষন্ড নরপিচাশ হোসেন আলী ধর্ষনের ঘটনা ভিডিও করে রাখে। কিশোরীর জ্ঞান ফিরলে সে বুঝতে পারে তার সাথে অনৈতিক কর্মকান্ড করা হয়েছে।
এ সময় হোসেন আলী ঐ কিশোরীকে ভিডিও দেখিয়ে কাউকে কিছু না বলতে ভয়ভীতি দেখায় এবং তার সাথে এ ধরণের অনৈতিক শারিরীক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাপ প্রয়োগ করে। একই সাথে চাপ প্রয়োগ করা হয়, কাউকে কিছু বললে এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হবে।
পরের দিন সকালে আবারও তামান্না বেগম ওই কিশোরীকে ডেকে এনে তার স্বামী হোসেন আলীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে বসে পাহাড়া দেয়। এভাবে ভয়ভীতির মাধ্যমে ঐ কিশোরীকে হোসেন আলী তার স্ত্রী তামান্না বেগমের মাধ্যমে নিজ বাসায় ডেকে এনে গত ৫ মে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, এই সময়ে ঐ কিশোরী যাতে গর্ভবর্তী না হয়, সে জন্য হোসেন আলী তার স্ত্রীকে দিয়ে জন্মনিরোধ পিল খাইয়ে দেয়।
কিশোরী এ সব ঘটনা তার মাকে বলে। উপায়ন্তর না পেয়ে এবং কিশোরী মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে গত ৭ মে ঐ বাসা ছেড়ে নগরীর চায়না মোড় এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। প্রভাবশালী হোসেন আলী এতেও ক্ষান্ত না হয়ে কতক লোকজন নিয়ে কিশোরী ও তার পরিবারকে অপহরণসহ খুনের উদ্দেশ্যে ঐ এলাকায় মহড়া দিতে থাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে কিশোরী পিতা পুলিশ ও র্যাবের কাছে অভিযোগ করে। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে কৃষ্টপুর এলাকা থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে হোসেন আলীকে আটক করে। এ ঘটনায় কিশোরীর পিতা হোসেন আলী ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদি হয়ে ধর্ষন মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় হোসেন আলী ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
জেলা ও মহানগর জাতীয়পার্টির একাধিক নেতা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বহু আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি হোসেন আলী। নারী গঠিত অনৈতিক কাজ জাপা সমর্থন করেনা। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটাকে রাজনৈতিকভাবে টানবেন না। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়দের মতে, হোসেন আলীর বিরুদ্ধে নারী সংক্রান্ত এবং খুনের মত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল সেলিম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। প্রকৃত ঘটনা জেনে নেতৃবৃন্দের সাথে পরমর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ছাড়া কোন অঙ্গসংঠনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।