দেশজুড়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি
২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার পর এক বছর স্বস্তি মিললেও চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়; দেশের ৪৬টি জেলায় পাওয়া গেছে ডেঙ্গু রোগী।
বর্তমানে ঢাকার বাইরের ৩০ জেলায় ১২৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ ১৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন মিডফোর্ড হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৪ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। এদিকে রাজধানীর জুরাইন এলাকাকে রেড জোন ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর ব্যতীত ৫, ফরিদপুর ১৩, গাজীপুর ২৭৬, কিশোরগঞ্জ ২০, মাদারীপুর ১৬, মানিকগঞ্জ ৪, মুন্সীগঞ্জ ১, নরসিংদি ২, রাজবাড়ী ৪, শরিয়তপুর ১৪, টাঙ্গাইল ১ জন, ময়মনসিংহ ২, জামালপুর ৫, শেরপুর ১, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৭, চট্টগ্রামে ৩২ জন, খাগড়াছড়িতে ৩, বান্দরবান ১, ফেনী ৯, কুমিল্লা ১১, চাঁদপুর ১১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জন, খুলনায় ২, বাগেরহাট ৪, যশোর ৩৪, ঝিনাইদহ ৫, মাগুরায় ২, নড়াইল ৯, কুষ্টিয়া ৩, মেহেরপুর ৩, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১, নওগাঁয় ৫, বগুড়া ৬, সিরাজগঞ্জ ৬, পাবনা ২, রংপুর ২, কুড়িগ্রাম ১, নীলফামারী ৪, দিনাজপুর ৮, গাইবান্ধা ১, বরিশাল ৯, পটুয়াখালী ১৭, পিরোজপুর ২, বরগুনা ২, বালকাঠি ৪, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ এবং সিলেটে ৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু নিয়ে মোট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৭০ জন। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৩৭ জন।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৮৪ জন হাসপাতালে : সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমেছে। শুক্রবার সকাল ৮ থেকে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু নিয়ে ১৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৩৭ জন ভর্তি হয়েছিল। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ১৬৯ জন ঢাকায়, ১৫ জন ঢাকার বাইরে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯৩০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৮২৩০ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। বর্তমানে সারা দেশে ১০৩২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৯০৫ জন ঢাকায়; ঢাকার বাইরে ১২৭ জন।
সবচেয়ে বেশি রোগী মিডফোর্ডে : রাজধানীতে ১২টি সরকারি ও ৩০টি বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- রাজধানীর সবচেয়ে মিডফোর্ট হাসপাতালে রোগী বেশি ভর্তি রয়েছে। এই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ১৯৮ রোগী ভর্তি থাকার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ৬১ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৫০ জন ভর্তি। বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের মধ্যে বেশি ভর্তি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে; ৫৩ জন। এরপর রয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও আদদ্বীনে ৫০ জন করে। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৬ জন।
জুরাইন রেড জোন ঘোষণার দাবি : রাজধানীর জুরাইনের ৫৩নং ওয়ার্ডের সবুজবাগ, রিশিপাড়া, কুসুমপাড়া ও বাগানবাড়িতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কোনো কোনো পরিবারে তিন-চার-পাঁচ জন করে আক্রান্ত। একজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন আরেকজনকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এই এলাকা রেড জোন ঘোষণা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জুরাইনে ডেঙ্গু নিয়ে গেল কয়েক দিনে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর হোসেন মীরু জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চলছে।
বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা : এ বছর ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের ৫০ শতাংশের বেশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার। এলাকাভিত্তিক সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁও, রামপুরা ও মোহাম্মদপুরে।
তাই শিশুদের মশার কামড় থেকে রক্ষায় তাদের শরীর ঢেকে রাখে এমন কাপড় পরানো এবং দিনে ও রাতে ঘুমানোর আগে মশারী টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। বাসার ভেতরে ও বাসা বাড়ির আশপাশে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা এবং কোথাও পানি জমে থাকলে তা তিনদিনে একদিন অপসারণের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।