রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
আলোচিত সংবাদজাতীয়ব্রেকিং নিউজ

দুর্গাপূজার সপ্তমীতে মণ্ডপে ভক্তদের ভিড়

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সপ্তমী আজ। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হচ্ছে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। একইসঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এ সময় তারা মায়ের সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করবেন এবং অঞ্জলি দেবেন।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সব মন্দিরেই সকাল থেকে শুরু হয় সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা অর্চনা করা হবে। এছাড়াও দিনব্যাপী চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলবে বলে জানান সর্বজনীন পূজা আয়োজকরা।

সপ্তমীতে সকালে মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ভক্তরা প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরহিতের সঙ্গে মন্ত্রে সুর মিলিয়ে করছেন দুর্গা মায়ের বন্দনা। কেউ কেউ এসেছেন শুধু দেবী দর্শনে। পূজা শেষে বিতরণ করা হয়েছে মহাপ্রসাদ। এ সময় দীর্ঘ লাইনে প্রসাদ নিতে দেখা গেছে ভক্তদের।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত রায় পরিবারসহ এসেছিলেন কলাবাগান পূজা মণ্ডপে। প্রার্থনা শেষে তিনি জানান, ভক্তদের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে মা প্রতি বছর আসেন। আমাদের মধ্যে অনাবিল সুখ-সমৃদ্ধি বিলিয়ে দিয়ে বিদায় নেন। তাই মায়ের কাছে সুখ-শান্তি সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করি। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে যেন সবাই পরিবারসহ নিরাপদে থাকেন, দেশে শান্তি বজায় থাকুক।

দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই। সনাতন ধর্মমতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন- বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন– দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা এসেছেন দোলায় চড়ে, আর দশমীর দিন বিদায় নিবেন এই ঘোড়ায় চড়ে।

বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এছাড়া আগামিকাল ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১২ অক্টোবর মহানবমী। তবে পঞ্জিকা মতে, ১২ অক্টোবর মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী উদযাপন করা হবে। সেদিন বিকালে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে।

অষ্টমীতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হবে। এদিন ১১ অক্টোবর সকাল ৯টায় ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। অষ্টমীর দিন বিশেষ আকর্ষণ থাকে কুমারী পূজা এবং সন্ধিপূজায়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়েছিল। সে হিসেবে এবার ঢাকায় চারটি পূজা মণ্ডপ বেড়েছে।

পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি সারা দেশের পূজা মণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে– ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। উচ্চ শব্দের মাইক, পিএসেট ও আতশবাজি, পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয়সংগীত ছাড়া অন্য কোনও গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং, ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনও দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে প্রভৃতি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *