দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েক প্রকার সবজি ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই কমেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে মাংসের বাজারেও। খাসির মাংস ছাড়া সব মাংসেরই দাম কমেছে। তবে সবজি-মাংসের এই দাম কমা মানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, এমনটা বলা যাবে না। কারণ সব সবজিই এখনও উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সর্বনিম্ন সবজির দাম এখনও ৬০ টাকা। সব ধরনের মুরগির দামই কমেছে। তবে ব্রয়লার মুরগির কেজি এখনও ২০০ টাকার নিচে নামেনি। আবার ৩০০ টাকার নিচে নামেনি কক মুরগির দামও। গরুর মাংস গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হলেও আজ তা আবার ৭৮০ টাকাতেই আটকেছে।
নামেমাত্র সবজির দাম কমলেও এরইমধ্যে হঠাৎই বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। হুট করেই প্রয়োজনীয় এ পণ্যটি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। একই সঙ্গে আবারও বেড়েছে মুরগির ডিমের দামও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ক্রেতারা বলছেন, পণ্যের দাম কোনোভাবেই কমছে না। এতে চাপ বাড়ছে তাদের ওপর। তারা আর কখনও কম দামে কিছু পাবেন না বলেও আশঙ্কা করছেন।
শুক্রবার (১৭ মে) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, বেশির ভাগ সবজির দাম কমেছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। কিছু সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আবার কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছেও। তবে দাম কমেও এসব সবজি আসেনি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে। আজকের বাজারে টমেটো ৭০ টাকা, দেশি গাজর ১০০, লম্বা বেগুন ৮০, সাদা গোল বেগুন ৮০, কালো গোল বেগুন ৯০, শসা ৫০ থেকে ৭০, উচ্ছে ৬০, করলা ৬০, কাঁকরোল ৯০ থেকে ১০০, পেঁপে ৭০ থেকে ১০০, মুলা ৬০, ঢ্যাঁড়স ৬০, পটল ৬০ থেকে ১০০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০, ধুন্দল ৬০ থেকে ৮০, ঝিঙা ৬০ থেকে ৮০, বরবটি ৮০, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০, কচুরমুখী ১৪০, শজনে ১৬০, কাঁচা মরিচ ১৬০ ও ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা ও চালকুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রায় সব সবজির দামই কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। ২০ টাকা করে দাম বেড়েছে টমেটো ও শজনের দাম।
কাঁচা মরিচের দাম কেন হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে বিক্রেতা রুবেল বলেন, আমি তো খুচরা বিক্রি করি, তাই সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে শুনেছি অতিরিক্ত গরমে নাকি গাছ মরে যাচ্ছে, তাই দাম বাড়ছে।
এদিকে বাজার করতে আসা আমজাদ হোসেন বলেন, টাকার অঙ্কে সবজির দাম কমেছে, এটা সত্যি কথা। কিন্তু এটাকে কম দাম বলে না। আমাদের এখনও ভেবেচিন্তেই কিনতে হচ্ছে। যেটা পছন্দ হচ্ছে, সেটাই কিনতে পারছি না।
আরেক ক্রেতা রাকিবুল ইসলাম বলেন, এই যে আমরা প্রতিদিন লাগে এমন পণ্য বেশি দামে কেনাকাটা করছি, এতে আমাদের ওপর চাপ বেড়েই চলছে। মনে হচ্ছে আমাদের উচ্চমূল্যেই অভ্যস্ত করে ফেলা হচ্ছে। আমরা আর কখনও কম দামে কিছু পাবো না।
এদিকে আজকের বাজারে মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ২২০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৪০ টাকা, ভারতীয় ২৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতি সপ্তাহের ব্যবধানেই দেশি রসুনের দাম বাড়ছে ২০ টাকা করে। আর আলুর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা করে।
রসুনের দাম কেন প্রতি সপ্তাহেই বেড়ে চলছে, জানতে চাইলে বিক্রেতা হালিম বলেন, রসুনের দাম বাড়ছে কারণ যখন রসুনটা নতুন ওঠে, তখন তেমন পরিপক্ব থাকে না তাই দাম কম থাকে। এখন আস্তে আস্তে পরিপক্ব হচ্ছে তাই দামও বাড়ছে।
এ ছাড়া আজ বাজারে ইলিশ ওজন অনুযায়ী ১৮০০ থেকে ২৪০০ টাকা, রুই ৩৬০ থেকে ৫০০, কাতল ৪৫০ থেকে ৬৫০, কালিবাউশ ৪০০, চিংড়ি ১০০০ থেকে ১৪০০, কাঁচকি ৬০০, কই ২৬০ থেকে ৫০০, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, শিং ৪০০ থেকে ১০০০, টেংরা ৫৫০ থেকে ৮০০, বেলে ৬০০ থেকে ১২০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১০০০ ও রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামই কমেছে। আজ ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২০৫ থেকে ২১৫ টাকা, কক মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০, লেয়ার মুরগি ৩৩৫ থেকে ৩৪০, দেশি মুরগি ৬৫০, গরুর মাংস ৭৮০ ও খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১৪৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৪০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা, কক মুরগির দাম ৪০, লেয়ার মুরগির দাম ৫ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম ২০ টাকা কমেছে কেজিতে। এ ছাড়া গরুর মাংস গত সপ্তাহে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ তা ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ৫ টাকা ও সাদা ডিম ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম আরও কমবে জানিয়ে ইব্রাহিম চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যেই ব্রয়লার মুরগির দাম কমে যাবে। তখন প্রতি কেজি ২০০ টাকার নিচেই হবে।
এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০, ছোট মসুর ডাল ১৪০, মোটা মসুর ডাল ১১০, বড় মুগডাল ১৬০, ছোট মুগডাল ১৯০, খেসারি ডাল ১২০, বুটের ডাল ১১৫, ডাবলি ৮০ ও ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০, খোলা ঘি ১২৫০, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫, খোলা চিনি ১৩৫, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ ও খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের সব পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও জিরার দাম বেড়েছে জানিয়ে সেলিম জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, গত সপ্তাহে আমার জিরা কেনা ছিল ৬৪০ টাকা, বিক্রি করেছি ৬৮০ টাকা। কিন্তু আজ আমার কেনাই আছে ৭২০ টাকা, তাই বিক্রি করছি ৭৫০ টাকায়। ঈদ আসবে বলেই হয়তো এখন থেকেই দাম বাড়িয়ে রেখেছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা।