মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫
মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫

জমে উঠেছে ফুটপাতের ঈদ বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধুম লেগেছে কেনাকাটায়। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিপণী বিতানগুলোতে জমজমাট কেনাবেচা চলছে।

এরই মধ্যে জমে উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসাস্থল ফুটপাতের ঈদ বাজারও। ধনীদের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষেরাও পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ব্যস্ত কেনাকাটায়। তাদের ভরসা মূলত ফুটপাতের দোকানগুলো।

ফুটপাতের এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সকল বয়সের নানা ডিজাইন ও রঙের পোশাক। ফুটপাতে স্বল্প আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে পেরে যেমন খুশি, তেমনই দোকানিরাও পণ্য বিক্রি করে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তবে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের হাতে এখনও ঈদের বোনাস এসে পৌঁছেনি। ফলে ফুটপাতে কেনাবেচায় কিছুটা ভাটা থাকলেও বিক্রেতাদের প্রত্যাশা শেষ সময়ে তা পুষিয়ে যাবে।

ফুটপাতে কি নেই? শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার, থ্রি-পিস, কামিজ, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, গেঞ্জি, টুপিসহ ঘর সাজানোর জিনিস থেকে শুরু করে সবকিছুই এখানে পাওয়া যাচ্ছে।

সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, মৌচাক মার্কেটের সামনের ফুটপাতের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় এসব জায়গায় প্রচুর মানুষের ভীড়।

‘দেইখ্যা লন পাঁচশ, বাইছ্যা লন পাঁচশ, একদাম পাঁচশ’ বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে ডাকছেন রাজধানীর গুলিস্তানের সামনের ফুটপাতের দোকানিরা। তবে এ হাঁকডাকের শব্দ এখন পুরো রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাতেই শোনা যাচ্ছে।

গুলিস্তান মাজারের সামনের ফুটপাতে কেনাকাটা করছিলেন বিল্লাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এবার ঈদ করবো। মা-বাবা ও ভাইয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করছি। বাবা আর ভাইয়ের জন্য শার্ট-লুঙ্গি, মা এর জন্য শাড়ি নিয়েছি। ফুটপাত থেকে খুঁজে কিনতে পারলে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। আর দামেও কম পড়ে।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে পাঞ্জাবি বিক্রি করছিলেন জলিল মিয়া। তিনি বাসস’কে বলেন, ঈদের বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। তবে এখন যে পরিমাণ মানুষ দেখছেন, তাদের অনেকে দেখতে আসছেন। মানুষ এখনও বেতন পায়নি। ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে আমাদের বিক্রি ভালো হবে। এখন যা বিক্রি করছি সেটাও একেবারে খারাপ বলা যায় না।

ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এসেছেন সোহেল রানা। কাজ শেষ করে বরিশাল যাওয়ার সময় গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে সেরে নিচ্ছিলেন ঈদের কেনাকাটা। তিনি বাসস’কে বলেন, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ফুটপাতের দোকানগুলো হলো এক ধরনের আশির্বাদ। ফুটপাত থেকে কম দামে কাপড় কেনা যায়, তাই এখান থেকে ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি তার নিজের জন্যও কয়েকটা কাপড় নেবেন।

তিনি বলেন, ঈদের আগে ঢাকায় আর আসার মত সুযোগ হবে না, তাই ঈদের জামাকাপড় এখনই নিয়ে যাব।

ফুটপাতের কাপড়ের দামের প্রসঙ্গ তুললে মৌচাক আনারকলি মার্কেটের সামনের বিক্রেতা মো. রাব্বি বাসসকে বলেন, ‘মার্কেটের কাপড় আর আমাদের কাপড়ের মধ্যে তেমন পার্থক্য নাই। আমাদের এসি খরচ নাই, লাইট খরচ নাই, তাই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি ।’

বিক্রেতা রাব্বির দোকানের সামনে কথা হয় বেসরকারি চাকুরিজীবী জহিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, শপিং মল থেকে এখানে কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। সেজন্য এখান থেকে কম দামে পরিবারের সবার জন্য কাপড় নিয়ে যাব। ছেলে মেয়ের জন্য ঈদের জামা কিনেছি। আর আমার জন্য দেখছি।

আকলিমা আক্তার আঁখি নামের একজন বিক্রেতার কাছে বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতা আসছে, তবে প্রচুর নয়। ঈদের তো আরো ক’দিন বাকী। শেষমুহূর্তে আশা করি পা ফেলার জায়গা থাকবে না।

ব্যবসায়ী জামাল মোল্লা বলেন, কম বাজেটের মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দ হয় এমন বাহারি নকশা ও রঙের সব পোশাক আমরা রেখেছি। তাই ক্রেতাদের কোনো না কোনো জিনিস পছন্দ হচ্ছে আর কিনেও নিচ্ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত লোকজনও ফুটপাতের দোকানে কেনাকাটার জন্য আসেন বলে এই বিক্রেতা জানান।

রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকার ফুটপাতেই প্রায় সারা বছরজুড়ে পণ্য বেচা কেনা চলে। তবে ঈদ এলে ফুটপাতগুলোর জমজমাট পরিস্থিতি হয়ে ওঠে দৃষ্টি কাড়ার মতো। ক্রেতা বিক্রেতার হাঁকডাক আর বাহারি পণ্যের নজড়কাড়া রূপ বিপণী বিতানগুলোর মতো ফুটপাতের ঈদ বাজারগুলোকেও নগরবাসীর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *