রবিবার, মে ৪, ২০২৫
রবিবার, মে ৪, ২০২৫

গাজায় ক্ষুধায় ৫৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ১৮ মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজাতে সর্বাত্মক অবরোধও জারি রেখেছে।

এর ফলে গাজায় বহু মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট। এমনকি যুদ্ধের শুরু থেকে গাজায় ক্ষুধায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭ ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনির বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ।

গাজার মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে শনিবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অবরোধের ফলে অন্তত ৫৭ ফিলিস্তিনি নাগরিক ক্ষুধায় মারা গেছেন বলে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। শনিবার গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকায় খাদ্য, শিশুদের দুধ, পুষ্টিকর উপাদান এবং জরুরি ওষুধ প্রবেশ করতে পারছে না।

শনিবার গাজা সিটির আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে একটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে।

গাজার মিডিয়া অফিস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খাদ্যকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে, টানা ৬৩ দিন ধরে চলমান অবরোধের ফলে ২৪ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন। ক্ষুধায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রোগী।

অফিসটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সব সীমান্ত খুলে দিয়ে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এপি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ৮০ শতাংশ মানুষ সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু অবরোধের কারণে এই সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি দ্রুত বাড়ছে জানিয়ে ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে মার্চ মাসেই ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে।

খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজায় কমিউনিটি কিচেন ও খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে জায়গা ও সরঞ্জামের অভাবে শুধুমাত্র সবচেয়ে গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত বছরের নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) মামলা চলছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *