বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৫

কুমিল্লায় বন্যার পানি নামার পর ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

কুমিল্লা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে বন্যার পানি নামার পর ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। কুমিল্লা বন্যাকবলিত উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যকবলিত উপজেলাগুলো ঘুরে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা-বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া-মীরপুর সড়ক, রাজাপুর-শংকুচাইল সড়ক, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রামের সড়ক ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়কগুলো ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়ক যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে। সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

এলজিইডি সূত্র জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ১৪টি উপজেলার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে সেতু ও কালভার্ট। এসব সড়ক ও সেতু মেরামত এবং পুননির্মাণে কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। কারণ বিভিন্ন জায়গায় সড়কের ওপর এখনো পানি। তবে সম্পূর্ণভাবে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, ব্রাক্ষনপাড়া উপজেলার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা যায়, বুড়িচং সদর থেকে রাজাপুর হয়ে শংকুচাইল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পাঁকা সড়ক। এটি উপজেলার একটি ব্যস্ততম সড়ক। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। এরই মধ্যে সড়কটি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তার সঙ্গে দেখা দিয়েছে ক্ষত।

বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। হরিপুর গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাক মোতালেব হোসেন বাসসকে বলেন, সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। ২১ আগস্ট রাতে বাঁধ ভেঙ্গে এলাকায় পানি ঢুকে। তড়িঘড়ি করে পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। গত দশ-বারো দিন ধরে গাড়ি চালাতে পারছি না। গর্তগুলা ভরাট না করলে কোনোভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।

দ্রুত সড়কের মেরামতের দাবি জানাই। হরিপুর গ্রামের শাহিন বলেন, এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। বন্যার পানিতে পুরো উপজেলা ডুবে যায়। এখন পানি কমায় সড়কের বড় বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে সড়কটি মেরামত করার জন্য কাজ করছি । বুড়িচং উপজেলা প্রকৌশলী আলিফ মাহমুদ বাসসকে বলেন, পুরো উপজেলায় এখনো পানি। কিছু কিছু জায়গায় পানি কমতে শুরু করেছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আগে মেরামত করার চেষ্টা করব। এদিকে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বন্যার পানি কমে পরিস্থিতির আরও উন্নত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, ১০ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ৭শ’ ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৮ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ২২৫টি মেডিকেল টিম এসব অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

জেলা প্রশাসন থেকে ৩৯ লাখ নগদ টাকা ও ৮০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কুমিল্লা জেলায় ১৬ শ’ টন চাল, নগদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে কুমিল্লায় ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা ত্রাণগুলো দুর্গতদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন। গত কয়েকদিনে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *