বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আলোচিত সংবাদজাতীয়ব্রেকিং নিউজ

এমপি আনার হত্যায় কলকাতায় আরও এক সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়ামকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ তথ্য জানিয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে নিউটাউনের ওই ফ্লাটে আনারকে খুন করে লাশ টুকরো করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় নেওয়া হয় ১০ মিনিটেরও কম। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় অন্তত পাঁচজন। এরপর ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে খণ্ডিত অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। এছাড়া বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটের ফ্রিজে ও প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে মরদেহের কিছু টুকরো। প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত WB18 AA 5473 নম্বরের গাড়িটিও জব্দ করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গাড়িটিকে শনাক্ত করার পর মালিকসহ সেটি নিউটাউন থানায় আনা হয়। গাড়িটি থেকে ফরেনসিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাহীনের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে। আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে আমানকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ভারতীয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার মলপাড়া লেনের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসককে দেখানোর উদ্দেশে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায়় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। উল্টো দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে জানান, তাকে আর ফোন করতে হবে না। দরকার হলে তিনি তাকে (গোপাল বিশ্বাস) ফোন করবেন। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনোভাবেই তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবে উৎকণ্ঠা ছড়ায় তার বাংলাদেশের বাসায়। পাশাপাশি গোপাল বিশ্বাসও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এরপরই কোনও উপায় না দেখে গত ১৮ মে শনিবার বরানগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল বিশ্বাস।

জিডিতে গোপাল বিশ্বাস লিখেছেন, গত ১৩ মে দুপুর দেড়টার পর ডাক্তার দেখানোর কথা বলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। যাওয়ার সময় বলে যান, দুপুরে খাবো না, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো। যাওয়ার সময় নিজে গাড়ি ডেকে বরাহনগর বিধান পার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যান। এরপর তিনি সন্ধ্যায় বরাহনগর থানার অন্তর্গত মণ্ডলপাড়া লেনে বাড়িতে না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেন, আমি বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। গিয়ে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।

গোপাল বিশ্বাস মিসিং ডায়েরিতে আরও লিখেছেন, গত ১৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছে, ফোন করার দরকার নেই।

এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২২ মে) অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেন এমপি আনারের মেয়ে মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন। তবে এতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আহাদ আলী

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *