বুধবার, এপ্রিল ২, ২০২৫
বুধবার, এপ্রিল ২, ২০২৫

ঋনের বোঝা, অপমান, অর্থাভাব থেকেই নিজ স্ত্রী ও দু:সন্তানদেরকে হত্যা

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রিপল মার্ডারের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসামীকে বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর গ্রেফতার করা হয়। আর্থিক অনটন, অপমান, ঋণের বোঝা ও মানসিক হতাশা থেকে আসামি আলী হোসেন শ্বাসরোধ করে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে বলে জানায় পুলিশ।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া গ্রাম থেকে মাংস বিহীন হাড় মাটির উপর পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটিতে পুঁতে রাখা ৩ টি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
পরে নিহতদের আত্মীয়-স্বজন থানায় এসে তাদের পরিচয় সনাক্ত করে। সনাক্তকৃত পরিচয় থেকে জানা যায় নিহতরা হলেন আমেনা খাতুন (২৫), তার দুই ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিকি (৪) ও আনাছ (২ বছর ৬ মাস)। ঘটনার পর থেকে আলী হোসেন গা ঢাকা দেয়।

এঘটনায় আমেনা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন গত বুধবার (২২মে) ত্রিশাল থানায় তার মেয়ের স্বামী আলী হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়েরের পর ডিবি পুলিশের টিম এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামে। এরই এক পর্যায়ে হত্যাকান্ডের মূল হোতা ভিকটিমের স্বামী আলী হোসেনকে গত ২২ মে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামী আলী হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা প্রদান করে। তার জবানবন্দির সূত্র ধরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, আলী হোসেন দিন মজুরের কাজ করত। তার কোন জমিজমা ছিলনা। তার চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতো। সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তাই সে বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী আমেনার নাম দিয়ে এনজিও থেকে টাকা তুলত।

বেশ কিছুদিন পূর্বে সে একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হত। প্রায়ই তার ছেলে ও বৌ না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে ২-৩ মাস পূর্বেই আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেয় তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে হত্যা করার।

সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী আলী হোসেন গত শুক্রবার (১৭মে) রাত ২টায় তার স্ত্রী ও সন্তান ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকে ঘুমিয়ে থাকা আমেনা খাতুনের গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর বিছানায় থাকা তার দুই ছেলেকেও ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তিনটি মরদেহ ঘরের পিছন দিয়ে বের করে একটি কৃষি জমিতে গর্ত করে তার স্ত্রী ও তার ২ সন্তানের মরদেহ পুতে রেখে সে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল।

পুলিশ আরও জানায়, আসামী আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা ছিল। সেই মামলায় ৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *