উন্নয়নে সহযোগীদের নিয়েই চলবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে, আমি তাদের নিয়ে চলব।
রোববার (২ জুন) সকাল ১০টায় গণভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং এক মিনিটব্যাপী ভিডিওচিত্র তৈরি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিতদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার প্রদান শেষে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কার দেশের সঙ্গে কার দেশের ঝগড়া সেটা আমার দেখার দরকার নেই। নিজের দেশের উন্নয়নটা আমার আগে দরকার। উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে আমি তাদের নিয়েই চলবো। সেভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই এবং সেই বন্ধুত্ব রেখেই কিন্তু আমি এগিয়ে যাচ্ছি।
১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর, জার্মানিতে ৬ বছর নির্বাসনে থাকাকালীন জয়-পুতুল খুব দেশে আসতে চাইত৷ সারা দিন কান্নাকাটি করত৷ ইন্দিরা গান্ধীও অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমাদের দেশে আসতে দেয়া হয়নি৷
তিনি বলেন, ইতিহাস বিকৃতি এখন মুছে গেছে৷ মানুষের সামনে সঠিক ইতিহাস উঠে এসেছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন৷ সবাই সেটা জানতেন; কিন্তু স্বাধীনতার কথা মুখে বলা বারণ ছিল৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই জয় বাংলা স্লোগানটাও বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর আর কোন দেশে এভাবে একটা যুদ্ধ করে যারা এত আত্মহুতি দেয় তাদের এত অবমাননা করে। বাংলাদেশে এমন একটা সময় এসেছিল যখন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি এ কথাটা বলার সাহস ছিল না।
সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, এ বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। ১৫ আগস্টের পর আমাদের যেভাবে ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করেছে আর যেন এটা না করতে পারে কেউ সেজন্য আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে। দেশটাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এক শ্রেণির লোক আছে, যারা বেশ জ্ঞানী-গুণী, কিন্তু তারা শুধু নিজেদের আরাম-আয়েশের দিকে বেশি তাকায়। তারা সবসময় অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আর তাদের সঙ্গে ইন্ধন জোগায় স্বাধীনতাবিরোধী দেশগুলো, যারা ‘সেভেন ফ্লিট’ পাঠিয়েছিল। তাদের কাছে বাংলাদেশের বিজয় গ্রহণযোগ্য ছিল না।
নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে। এখন যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, জ্ঞানের যুগ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছোট্ট সোনামনি, আমাদের নতুন প্রজন্ম তোমরাই একদিন এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করতে হলে একটা আদর্শ লাগে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী দিনের পথ চলা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা যেন আরও সুন্দরভাবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। সেভাবেই কিন্তু নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষা ছাড়া কখনও এটা সম্ভব না। শিক্ষা ছাড়া কোনোদিন একটা জাতিকে দারিদ্রমুক্ত করা যায় না। শিক্ষাই হচ্ছে সব থেকে বড় অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের তৈরি হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা যেন নষ্ট না হয়। বাংলাদেশ যে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, উন্নত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তোমাদেরই গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। নিজের মর্যাদা নিয়ে চলবো। আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলবো এটাই আমাদের মাথায় সব সময় মনে রাখতে হবে। একটা কথা মনে রাখবে যে ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। ১৯৭৫ সালে আমরা কিন্তু ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত হয়েছিলাম।
প্রতিযোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে৷ রেহানা ও আমি ছেলেমেয়েদের একটা জিনিস শিখিয়েছি যে, তোমাদের জন্য কোনো সম্পদ রেখে যেতে পারব না৷ তোমাদের একটাই সম্পদ, সেটা হলো শিক্ষা৷ এটা অর্জন করলে কেউ ছিনতাই-হাইজ্যাক করতে পারবে না৷ কেননা, জ্ঞান তো কেড়ে নেয়া যায় না৷
নিজে নিজের কাজ করায় কোনো লজ্জা নেই মন্তব্য করে প্রতিযোগীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, করোনার সময় আমি আর রেহানা নিজেরাই ঘর মোছা, কাপড় কাচা, রান্নাসহ সব কাজ নিজেরা করেছি৷ কাজ করতে কখনও লজ্জাবোধ করি না৷