রবিবার, মার্চ ২৩, ২০২৫
রবিবার, মার্চ ২৩, ২০২৫

ঈদের কেনাকাটা : ছোট বাজেটে বড় আনন্দের খোঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও বেগুনবাড়ি বস্তিতে বাস করেন আছিয়া বেগম। স্বামী ভ্যানচালক। আছিয়া বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। তাদের দৈনন্দিন জীবনে অভাব লেগেই থাকে। এরমধ্যেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে চান তারা। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের নতুন পোশাক কিনতে আসেন কাওরান বাজারে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে আছিয়া শেষ পর্যন্ত ১ হাজার টাকার মধ্যে দুই সন্তানের জন্য দুটি পাঞ্জাবি, দুটি প্যান্ট ও দুটি গেঞ্জি কেনেন। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য মোট বাজেট ২ হাজার টাকা।

শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকালে কাওরান বাজার দুই নম্বর সুপার মার্কেটের সামনে দেখা মেলে এই পরিবারটির। আছিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদ বড়লোকদের জন্য। আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য কিসের ঈদ! তারপরও সন্তানরা নতুন পোশাকের জন্য কান্নাকাটি করছে। তারা জানে না আমরা গরিব মানুষ। আমাদের দুবেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘২ হাজার টাকা রেখেছিলাম স্বামী-সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কেনার জন্য। দুই ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, প্যান্ট আর গেঞ্জি কিনেছি। এখন স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি আর মেয়ের জন্য একটা জামা কিনবো। আমার জন্য কিছু লাগবে না। এরপর দুধ-সেমাইও কিনতে হবে।’

আছিয়ার মতো বহু পরিবার অর্থের অভাবে ঈদে পূর্ণ আনন্দের অংশীদার হতে পারে না। তাদের সীমিত বাজেট কখনোই ঈদের পূর্ণ আনন্দের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তবে হাসিমুখে সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কেনার যে প্রচেষ্টা, সেটি অনেককেই নতুন উপলব্ধি দেয়।

ঈদ ধনী-গরিব সবার জন্য। এই আনন্দের মুহূর্তটি সমাজের সব শ্রেণির মানুষই উপভোগ করতে চায়। তবে অর্থের প্রভাবে ঈদের আনন্দে পার্থক্য তৈরি হয়। উচ্চবিত্তরা ঈদের নতুন পোশাক কিনতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করলেও, নিম্ন আয়ের মানুষের ঈদ উদযাপনে থাকে সীমাবদ্ধতা। তবুও তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে চান।

রাজধানীতে যেমন লাখ টাকার পোশাকের মার্কেট রয়েছে, তেমনই ছোট বাজেটে সস্তা পোশাকের বাজারও রয়েছে। এমন একটি এলাকা হলো কাওরান বাজার। এখানে সস্তা দামে ঈদের পোশাক পাওয়া যায়। ৫০-১০০ টাকায়ও ঈদের পোশাক মেলে। স্থানীয়রা একে গরিবের ঈদ মার্কেট বলে ডাকেন।

কাওরান বাজারে দুই নম্বর সুপার মার্কেট এবং মার্কেটের সামনে রাস্তায় অর্ধশতাধিক ছোট ছোট দোকানে বিক্রি হচ্ছে কম দামের বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এসব দোকানে ছোট-বড় সবার জন্য কম দামে ঈদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটে শিশুদের জামা, প্যান্ট, গেঞ্জি এবং শার্টের দাম ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে বড়দের জন্য প্যান্ট, গেঞ্জি, শার্ট ও পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এমনকি কিছু দোকানে ঈদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট ও গেঞ্জি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়।

কাওরান বাজারের পোশাক দোকানিরা বলছেন, গরিব মানুষরে জন্য এই বাজারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। অল্প টাকার মধ্যে তারা ঈদের নতুন পোশাক কিনতে পারেন। এখানে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের জন্য পোশাক পাওয়া যায়। শুধু পোশাকই নয়, কিছু দোকানে নানা রকম গয়না, স্যান্ডেল এবং ঈদ উপহার সামগ্রীও বিক্রি হচ্ছে।

মিজানুর রহমান নামে এক দোকানি বলেন, ‘এখানে বেশিরভাগ মানুষ আসেন কম বাজেটে ঈদের পোশাক কিনতে। আমি নিজেও চেষ্টা করি, যাতে সবাই সাধ্যমতো ঈদের পোশাক কিনতে পারেন। অনেক সময় খুব কম দামে পোশাক বিক্রি করি।’

আরেক দোকানি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এখানে যারা পোশাক কিনতে আসেন, তাদের বেশিরভাগই দিনমজুর, ছোটখাটো দোকানদার এবং রিকশা বা ভ্যানচালক। তাদের আয় খুবই কম। তারা বছরের অধিকাংশ সময় এক-দুইটি পোশাকে দিন কাটান। ঈদ আসে, তাদের মনে থাকে শুধু সন্তানদের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনার চিন্তা, যাতে ঈদের দিনটা একটু আনন্দে কাটাতে পারেন।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *