আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
রাস্তা অবরোধ না করে প্রধান বিচারপতির আহ্বানে আদালতে এসে কথা বলতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ‘মুক্তিযুদ্ধ পুলিশ: ময়মনসিংহ জেলা গ্রন্থ’র মোড়ক উন্মোচন ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পৃথিবীর সব জায়গাতেই কোটা রয়েছে। যেমন আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য কিছু কোটা রয়েছে এবং সংবিধানেও সেটি বলা আছে। এই নৃগোষ্ঠীদের কোটা যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে এরা কোনো দিন মূল স্রোতে একত্রিত হতে পারবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কোটা উঠিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর বিচার বিভাগ থেকে বার্তা আসছে কোটা আবার চালু হবে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছে। শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে তারা যেন তাদের কথা উচ্চতর আদালতে বলে। তাহলে বিচারপতিদের বিচার করতে সুবিধা হবে। কাজেই আমি মনে করি তাদের অপেক্ষা করা উচিত। আন্দোলন থামানো উচিত। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট বন্ধ না করে তারা কোর্টে এসে তাদের কথা বলুক। রাস্তাঘাট বন্ধ করলে লাভ কী হবে আমি জানি না। দুর্ভোগ বাড়বে জনগণের। আমি মনে করি আপনারা প্রধান বিচারপতির পরামর্শ মতো আদালতে এসে আপনাদের কথা বলুন।
ময়মনসিংহ পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশ সুপার মাহমুদা আফরোজ লাকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সুধী সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ফুলপুর আসনের এমপি শরীফ আহমেদ, সদর আসনের এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত, গফরগাঁওয়ের এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, মুক্তাগাছার এমপি কৃষিবিদ ডা. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, বীরমুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ ও আব্দুর রব প্রমুখ।
এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন হালুয়াঘাটের এমপি মাহমুদুল হক সায়েম, ঈশ্বরগঞ্জের এমপি মাহমুদুল হাসান সুমন, ত্রিশালের এমপি এবিএম আনিছুজ্জামান, ভালুকার এমপি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, ফুলবাড়িয়ার এমপি আব্দুল মালেক সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফজালুর রহমান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে এসে জেলা পুলিশের ১১ প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং জেলা পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পগুলো হলো, ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট পুলিশ ব্যারাক ভবনের ২য় তলা থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমূখী নির্মাণ কাজ, পাগলা থানাধীন পাঁচবাগ তদন্ত কেন্দ্রের কার্যক্রম উদ্বোধন, ২নং শহর পুলিশ ফাঁড়ি ভবনের ৪র্থ তলা হতে ৬ষ্ঠ তলার নির্মাণ কাজ, ১নং শহর পুলিশ ফাঁড়ির ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজ, পাগলা থানা ভবনের ২য় তলার আংশিক এবং ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ (সিভিল, স্যানিটারী ও বৈদ্যুতিকসহ) এর অতিরিক্ত কাজ, পাগলা থানায় ৬তলা ভিতের ১তলা অফিসার ইনচার্জ কোয়ার্টার ও ৬তলা ভিতের ৩তলা ডরমিটরি ভবন নির্মাণ
কাজ, গৌরীপুর থানা ভবনের ২য় তলার আংশিকসহ ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজ, ফুলপুর থানা ভবনের ২য় তলার আংশিকসহ ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজ, ফুলবাড়ীয়া থানা ভবনের ২য় তলার আংশিকসহ ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজ, হালুয়াঘাট থানা ভবনের ২য় তলার আংশিকসহ ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজ, নান্দাইল থানা ভবনের ২য় তলার আংশিকসহ ৩য় ও ৪র্থ তলার নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন৷ পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞার ব্যতিক্রমী ও দূরদর্শী চিন্তার ফসল হিসেবে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সের অভ্যন্তরে বৃটিশ স্থাপত্যশিল্পের ঐতিহ্যের ধারক পুরাতন পুলিশ হাসপাতাল ভবনে নির্মিত বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিয্দ্ধু জাদুঘর, ময়মনসিংহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সদস্যদের বীরত্বপুর্ণ ভুমিকার উপজীব্য সংবলিত পাচটি গ্যালারী ও আর্কাইভ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই স্থাপনা।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ এবং পুলিশের আত্বত্যাগ সম্বলিত নাটিকা উপস্থাপন করা হয়।