আন্দোলনে গুলিবিদ্ধরা এখনও কাতরাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যালের বিছানায়
নেত্রকোণার তরুণ নবী হোসেন। কাজ করেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে ছিলেন। সবশেষ গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগ মুহূর্তে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে শর্টগানের ছররা গুলি তার পুরো শরীরকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায়।
এই তরুণে ভাষ্য, ‘আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে আছি, এতে কোনও কষ্ট নাই। আন্দোলন করে দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন করেছি, আমার নিজের জন্য কিছুই চাই না। শুধু চাই নতুন সরকার দেশটাকে সুন্দরভাবে সংস্কার করে দুর্নীতিমুক্ত করবে, মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিবে এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। দেশ স্বাধীন করার জন্য অনেক ভাই রাজপথে রক্ত দিয়েছে শহীদ হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, এটাই প্রত্যাশা।’
নবী হোসেনের শরীরে দুই শতাধিক ছররা গুলি এখনও বিঁধে আছে। গাজীপুরে কোথাও চিকিৎসা না পেয়ে ৫ আগস্ট রাতে এসে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মতো গুলিবিদ্ধ আহত আরও ২২ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্দোলনে আহতদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ সব ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আরেক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম সেখানে চিকিৎসাধীন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যারা সারা দেশে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছি, আমাদের দীর্ঘদিন এর কষ্ট নিয়েই চলতে হবে। তবে এই কষ্টের মধ্যেও আনন্দ অনুভব করি, যখন মনে হয় দ্বিতীয়বারের মতো আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি।’
এই তরুণের প্রত্যাশা, দেশে যেন কোনও ভেদাভেদ না থাকে, গণতন্ত্র ফিরে আসে; এর ব্যবস্থা করতে হবে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের শহীদী মর্যাদা দিতে হবে এবং আহতদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
অপর আহত আন্দোলনকারী নজরুল জানান, আন্দোলনে যে যারা আমরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি তাদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলাদা ওয়ার্ড খুলেছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিনামূল্যের সব ব্যবস্থা করেছে। আহত অনেকে আছেন, যাদের দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হবে। আমরা চাই, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সরকার সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে এবং পরবর্তী সময়েও যারা আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন, তাদের জন্য গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। বিনামূল্যে ওষুধ পরীক্ষার নিরীক্ষাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা তাদের দেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি যারা এখনও হাসপাতালে ভর্তি, তাদেরও সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।