সংবাদ শিরোনাম

 

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম : ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এবার ৪৮০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই (ডাল) চাষ হয়েছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে উঠা চরের দিগন্তজুড়ে যতদূর চোখ যায়, শুধু মাসকলাই ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। মাসকলাইয়ের বাম্পার ফলন হলে চলতি মৌসুমে ৫ শতাধিক কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।

চরআলগী ইউনিয়নের বালুয়াকান্দা গ্রামের কৃষক সৈকত মিয়া জানান, ধান চাষের উপর নির্ভরশীল চরাঞ্চলে কৃষকরা ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে উঠা চরে মাসকলাই চাষ শতাধিক কৃষকের জীবনে এবার এনে দেবে নতুন গতি। ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে এবার মাসকলাইয়ের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের চর ছাড়াও উপজেলার টাঙ্গাব, দত্তের বাজার ও পাঁচবাগ ইউনিয়নে প্রচুর মাসকলাই চাষ হয়েছে। এ তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ৫ শতাধিক কৃষক ফলন ভাল হওয়ায় আশাতীত লাভবান হবেন।

চরআলগী ইউনিয়নের বালুয়াকান্দা গ্রামের কৃষক আ. জলিল জানান, ব্রহ্মপত্র নদে জেগে উঠা চরে এবার সে ৪ একর জমি অন্যের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে মাসকলাই চাষ করেছে। ৪ একর জমিতে মাসকলাই চাষ করতে জলিলের ১৪শ টাকার বীজ লেগেছে। মাসকলাই গাছের তেজদীপ্ত অবস্থা দেখে তিনি বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি একরে কম করে হলেও ২৯ মন মাসকলাই উৎপাদন আশা করছেন তিনি। মাসকলাই চাষে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে উৎপাদন খরচ ছাড়া বিক্রির সম্পূর্ণ টাকাই লাভ হয়।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে উঠা চরে ৩ একর ও সুরুজ মিয়া ৪ একর জমিতে মাসকলাই চাষ করেছেন। তারা জানান, জমিতে মাসকলাই চাষ অত্যন্ত ভাল হওয়ায় আশা করছি- প্রতি একরে ৩০-৩২ মন করে উৎপাদিত হবে। প্রতি একরে উৎপাদিত মাসকলাই বাজার ভাল থাকলে ৯০ থেকে ৯২ হাজার টাকা বিক্রি হবে। শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও উৎপাদন খরচ ছাড়া যার প্রায় পুরোটাই লাভ।

তবে প্রয়োগ সম্পর্কে না জানা, চাষ পদ্ধতির উপর প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণের অভাব, রবি শস্যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায়, ভাল বিপনন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় কৃষকদের উৎপাদিত রবি শস্যে বেঁচে প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ করতে পারছে না এ অঞ্চলের কৃষকরা। সমস্যাগুলোর সমাধান হলে রবি শস্যে উৎপাদন করে পরিশ্রমী কৃষকরা আরো লাভবান হবেন বলে তারা আশা করছেন।

তাদের মতো চরআলগী ইউনিয়নের আরো শতাধিক কৃষক মাসকলাই চাষ করেছেন।  সবজি চাষ লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জীবনযাত্রার মান বদলাতে শুরু করেছে। এত সব সফলতার পরও তাদের মূল সমস্যা উৎপাদিত রবি শস্যে পরিবহন। রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় মাঠ থেকে ফসল মূল ভূ-খণ্ডে নিয়ে যেতে তাদের যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু চালু হলে পরিবহন খরচ কম হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার এস এস ফারহানা হোসেন বলেন, মাসকলাই (ডাল) চাষের পর কৃষকরা ধান ও গম করতে পারেন। পাশাপাশি সামান্য খরচে প্রচুর লাভ হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা মাসকলাই চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪৮০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই ডালের চাষ হয়েছে। রান্না করা মাসকলাই ডাল সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলে এর চাহিদা প্রচুর। মাসকলাই চাষে উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। উপার্জনের দিক দিয়ে মূল ভূ-খন্ডের চেয়ে চরের মানুষ কোন ভাবেই পিছিয়ে নেই।


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম